ফলন ও দামে খুশি কৃষক

বরেন্দ্রে বেড়েছে গম চাষ

রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে ধান ও গম চাষই ছিল কৃষকের প্রধান চাষাবাদ। এখনো প্রধান ফসল ধান। তবে নানা কারণে গমের চাষাবাদ কমে যায়। গত দুুই যুগে গমচাষে আগ্রহ হারায় কৃষক।

ফলন কম, ইঁদুরের অত্যাচার বাজারে দাম না পাওয়াসহ রোগ-বালাইয়ের কারণে গম চাষ মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলে সেই হারানো গম নতুন করে সুদিনে ফিরেছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ব্যাপক গম চাষ হয়েছে। ফলনও হচ্ছে দ্বিগুণ। বাজারে গমের ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকেও। মাঠে মাঠে এখন চলছে গম মাড়াইয়ের কাজ। এ অঞ্চলে কৃষকরা জানান, বর্তমানে উন্নতমানের গম বীজ পাওয়া যাচ্ছে।

আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন বেড়েছে তিনগুণ দামও বেশ ভালো। এছাড়াও সরকারিভাবে গম চাষ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে কৃষকদের। সরকারিভাবে কৃষকদের মধ্যে দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে গম বীজ, সার প্রণোদনা। এ কারণে চলতি বছর এ অঞ্চলে দুইগুণ বেড়েছে গমের চাষ।

কৃষি বিভাগ বলছে, রবিশস্যর অন্যতম ফসল হচ্ছে গম। কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় গমের চাষাবাদ বেড়েছে জেলায়। ফাল্গুন মাসের আধাআধি সয়ম পেরুতেই বরেন্দ্র অঞ্চলেজুড়ে গমসহ সকল প্রকার রবিশস্য কাটা-মাড়ার উৎসব শুরু হয়েছে। কৃষি শ্রমিকরা এখন সোনালি ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দিনরাত মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলবে পুরো চৈত্র মাস পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে কয়েক বছর আগেও হাতেগোনা কিছু কৃষক গম চাষ করতেন। গত বছর থেকে বেড়েছে এ অঞ্চলে গম চাষ। চলতি বছর বেড়েছে কয়েকগুণ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে গম চাষ হয়েছে ৩২ হাজার ৫৬১ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ২৩০ হেক্টরে। এবার আবাদ বেশি হয়েছে ৬ হাজার ৩৩১ হেক্টর।

এবার গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি গমের আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। এরপরে বাঘা উপজেলা আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর এবং চারঘাট উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও পবা উপজেলায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, বাগমারা ২ হাজার ৫৪০ হেক্টরসহ অন্যান্য উপজেলায় হয়েছে ৭ হাজার ২৭১ হেক্টর জমিতে।

কৃষকরা জানান, ধান ওঠার আগে সরকারিভাবে ধানের দাম নির্ধারণ করে থাকে সরকার। কিন্তু গমের দাম নির্ধারণ করে না। সে কারণে ধানের দাম বাড়লেও গম আবাদ করে এর নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন চাষিরা। এজন্য গম চাষে চাষিদের মাঝে অনীহা দেখা দেয়। কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে গমের চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন চাষিরা। তবে চলতি মৌসুমে কম সেচের গমের আবাদ বেড়েছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা চাদন্দালায় গ্রামের কৃষক তসিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ১১ বিঘা জমিতে গম চাষাবাদ করেছেন। গম কাটা শুরু করেছেন তিনি। গমের মাথা ভালো থাকায় অন্য বছরের চেয়ে ফলন বেড়েছে। প্রতি বিঘাতে ১৩ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ গম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।

তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান জানান, তিনি দেড় যুগ আগে গম চাষ করে সেভাবে ফলন পেতেন না। তাই গম চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে চলতি বছর সরকারিভাবে গম বীজ ও সার পেয়ে দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। কাটা মাড়াই শেষ করেছেন দুই দিন আগে। দুই বিঘা জমি এবার ৩২ মণ গম পেয়েছেন তিনি। বাজারে দাম ভালো থাকায় বেশ খুশি তিনি।

রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, নানা রোগ বালাইয়ের কারণে এ অঞ্চলে গমের আবাদ কমে গিয়েছিল। তবে গত বছর থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সরকারিভাবে কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা হিসাবে উন্নত জাতের গম বীজ ও সার বিতারণ করায় বরেন্দ্র অঞ্চলে গমের আবাদ বেড়েছে কয়েকগুণ। গমের ফলন ভালো হচ্ছে। গমে চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।