প্রথম প্রবাসী ভোটার হচ্ছেন দুবাইবাসী

প্রবাসীদের ভোটার করতে বিদায়ী তিন কমিশন বিদেশ সফরসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও মূলত সফলতা আসেনি। বর্তমানে প্রবাস থেকে অনলাইনে ভোটার হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে প্রবাসীদের আসতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে। তবে এবার দ্বাদশ ভোটের আগে প্রবাসীদের আবার ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।

সে ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরের প্রবাসীরাই প্রথম প্রবাসে বসে ভোটার হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। সব ঠিক থাকলে মার্চের শেষের দিকেই এ উদ্যোগ নেবে সাংবিধানিক সংস্থা ইসি। এ নিয়ে গত বুধবার বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তবে বিষয়টি এখনো কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে প্রবাসে বসে ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকলেও ভোট দিতে তাকে দেশেই আসতে হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটার হওয়ার ‍সুযোগ থাকলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয় না। যার ফলে আইনের ধারায় পরিবর্তন এনে ইলেকট্রিক ব্যালট চালু করতে হবে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

প্রবাসী ভোটারদের প্রবাসে গিয়ে ভোটার করার জন্য একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ও প্রবাসী অধিশাখার পরিচালক আব্দুল মমিন সরকার। তিনি বলেন, ‘খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় ভোটার করা হবে সে মডেলটি রেডি হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। তারা মূলত কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।’

বর্তমানে করা প্রায় ৯০ শতাংশ আবেদন ঝুলে আছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। বলেছেন, ‘সব বিষয় ঠিক থাকলে মার্চের শেষে দুবাইয়ে গিয়ে ভোটার করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘মার্চ মাসেই করা হবে। তবে কানাডার টরন্টোতে করারও পরিকল্পনা হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয় নাই।’

মার্চ থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ে প্রবাসীদের ভোটার করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘মার্চ থেকে শুরু হবে। সবকিছু প্রসেস চলছে। প্রবাসে বসেই তারা জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আইনগতভাবে পারলেও বাস্তবে বিষয়টা সম্ভব হয় না বলে তাদের ভোট দিতে বাংলাদেশেই আসতে হবে।’

যার ফলে আইনের পরিবর্তন করার প্রয়োজন রয়েছে মনে করে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর ব্যালট ইস্যু করতে ১২ থেকে ১৩ দিন সময় পাওযা যায়। তবে বেশির ভাগ সময় ব্যালট পেতেই সাত দিন লাগে। আবার কখনো কখনো দুই দিন আগে পাওয়া যায়।’

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (এনআইডি) এ কে এম হুমায়ুন কবীর অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মুখ খুলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে কমিশনে সিদ্ধান্ত হলেই তারপর কথা বলব। তার আগে কিছু বলব না।’

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘এটা মূলত আমাদের সাবজেক্ট না।’ তবে নির্বাচন কমিশনের নেয়া উদ্যোগকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন তিনি। বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’ এ বিষয়ে কোনো চিঠি পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি এখনো আসে নাই।’

১৯৯৮ সালে দেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত বলে রায় দেন। কিন্তু দীর্ঘ ২৫ বছরেও সেই ঘোষণা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের লক্ষ্যে ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তাদের ভোটার করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তা আলোর ‍মুখ দেখেনি। পরে কাজী রকিবউদ্দিন কমিশনও চেষ্টা করে সফলতার মুখ দেখেনি। বিদায়ী নুরুল হুদা কমিশন উদ্যোগ নিলেও করোনার থাবায় তা আটকে যায়।

সেবার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ছয়টি দেশ থেকে ভোটার হয়ে এনআইডি পেতে আবেদন করেছেন ৫ হাজার ১৩৮ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৬১০ জনের আবেদন এখন পর্যন্ত তদন্তই করেনি ইসি। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ আবেদন ঝুলে আছে। তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ৪৭৫ জনের, এর মধ্যে নানা কারণ দেখিয়ে ২০৩ জন প্রবাসীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া তদন্তাধীন রয়েছে ৫৩ জনের আবেদন। অর্থাৎ ৩ বছরে তদন্ত সম্পন্ন করে ২৭২ জনের আবেদন অনুমোদিত হয়েছে। তবে এনআইডি পেতে আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে তাদের আসতে হবে ইসিতে।