সুসংবাদ দিলেন নীলফামারীর সরিষা চাষিরা

কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় নীলফামারীতে বেড়েছে সরিষা আবাদ। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি সরিষা চাষের সুসংবাদ দিলেন জেলার ছয় উপজেলার কৃষকরা। এখন মাঠে মাঠে ফুটেছে সরিষা ফুল। যত দূর চোখ যায় হলুদের সমারোহ। বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও সময়মতো সরিষা ঘরে তুলতে পারলে বিক্রি করে অধিক লাভবান হবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ছয় হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাদ হয়েছে ছয় হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমিতে। গত বছর জেলায় পাঁচ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে আবাদ হয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে চলতি মৌসুমে ২৫২ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে।

এ বছর জেলা সদরে দুই হাজার ৯৮৫, সৈয়দপুরে ৩৯৮, ডোমারে ৭৫৬, ডিমলায় ৯৭৫, জলঢাকায় ৯৯৩ ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৬৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।

স্থানীয় চাষিরা জানিয়েছেন, দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় এবং ধান আবাদে লোকসান হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন তারা।

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের চড়চড়াবাড়ি গ্রামের লুৎফর রহমান এ বছর দেড় বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই-তিন মাসের মধ্যে সরিষা ঘরে তোলা যায়। এ ছাড়া কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। ফসল তোলা পর্যন্ত খুব একটা খাটাখাটনি করতে হয় না। বীজ ও নিড়ানি দিলেই আবাদ ভালো হয়।’

একসময়ে জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ হতো বলে জানালেন একই এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কৃষিপ্রযুক্তির উন্নয়নে সরিষা আবাদ থেকে সরে ধান চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক। তবে ইতোমধ্যে ধানে লোকসান হওয়ায় এখন সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন তারা।’

এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলন ভালো হয়েছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশা করছি। গত দুই মৌসুমে ধান আবাদে লোকসানে সবজি ও সরিষা আবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি।’

ধান আবাদে লোকসান হওয়ায় সরিষা আবাদ করেছেন বলে জানিয়েছেন পৌর শহরের নিউবাবু পাড়ার কৃষক মহিবার রহমান। তিনি বলেন, ‘সরিষা চাষে খরচ কম লাভ বেশি। সার ও সেচ না দিলেও চলে। বাজার দর ভালো। এক মণ সরিষা এক হাজার ৮০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।’

মহিবার রহমান উল্লেখ করেন, ‘এক মণ ধান সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ টাকা বিক্রি করা যায়। সরিষা এক হাজার ৮০০ টাকা। আগামীতে সরিষার পাশাপাশি শাকসবজি চাষ করবো। দফায় দফায় সয়াবিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে আছি আমরা। এবার ফলন ভালো হলে সয়াবিন তেল কিনতে হবে না। সংসারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রিও করতে পারবো।’

গত দুই মৌসুমের চেয়ে এবার ২৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বেশি হয়েছে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরিষা চাষে কৃষি বিভাগ কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই অর্জন। জমির উর্বরতা ধরে রাখার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করছি আমরা। কম খরচে অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল ঘরে তোলা যায়। আশা করছি, এবার সরিষার ভালো দাম পাবেন কৃষকরা।’