দেশের ব্যাংক খাতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ২০১৪ সালে চালু হয়। এজেন্টের মাধ্যমে দেয়া হয় এ সেবা, যা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে গেছে ব্যাংকগুলোর এজেন্টরা। এ সেবায় দিন দিন আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা হচ্ছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। ব্যাংকাররা বলেন, কেউ বাসার পাশে সেবা পাওয়ায়, কেউবা সঞ্চয়ের জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব খুলেছেন। কভিডকালে ব্যাংকগুলোর অনেক শাখা খোলা না থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিং ঠিকই খোলা ছিল। এ কারণে এ সেবার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত রাখার পাশাপাশি ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্স আনার পরিমাণও বেড়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৫৭ কোটি টাকায়, যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ২৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে পাঁচ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এখন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ৩১টি ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক এজেন্ট নিয়োগ, আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও রেমিটেন্স আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এজেন্ট আউটলেট চালুর ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এজেন্টদের মাধ্যমে হিসাব সংখ্যা চালুর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে ব্যাংক এশিয়া। এজেন্টদের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ইসলামী ব্যাংক। এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিটেন্স সংগ্রহে শীর্ষস্থানও দেশের বৃহৎ ব্যাংকটির। তবে এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান ব্র্যাক ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৩১টি ব্যাংকের এজেন্ট দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১২৬টি। ২০২১ সালের একই সময়ে এজেন্টের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৯৫২টি। এক বছরে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে এক হাজার ১৭৪টি। এ হিসাবে এজেন্টের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এজেন্টের মতোই গত এক বছরে এক হাজার ৪৮৯টি আউটলেট বেড়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ২৪৭টি।
গত বছরের ডিসেম্বরে আউটলেটের সংখ্যা ২০ হাজার ৭৩৬টিতে উন্নীত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে আউটলেট বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের পাশাপাশি ঋণ বিতরণও বেড়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে, যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল পাঁচ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে এক হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বা ৯২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
গত ডিসেম্বর শেষে ঋণ বিতরণের দিক দিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার আওতায় বিতরণ করা ঋণের ৬২ দশমিক ৬৬ শতাংশই এ ব্যাংকটির দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দ্য সিটি ব্যাংকের ঋণ প্রায় ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্যাংক এশিয়ার বিতরণ করা ঋণ এ খাতের মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। দেশের রেমিটেন্স আনায় বিপ্লব ঘটিয়েছে ব্যাংকগুলো নিয়োগ দেয়া এজেন্টরা।
২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছে, যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৮২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ৩২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বা ৩৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে আমানত সংগ্রহের শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রয়েছে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ। ব্যাংক এশিয়ার ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের ১২ শতাংশ ও অগ্রণী ব্যাংকের ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
রেমিটেন্স আসার দিক দিয়েও শীর্ষ রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংকটির মাধ্যমে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ ৫২ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ২৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্যাংক এশিয়ার ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এছাড়া আল-আরাফাহ্ ব্যাংকে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ ও অগ্রণী ব্যাংকে ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।