‘ফাও ফসল’ সরিষায় কৃষকের বাজিমাত

সরিষা ফাও ফসল হিসেবে কৃষকের কাছে পরিচিত। জমি পতিত না রেখে অল্প সময়ের মধ্যে সরিষা চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখছে জামালপুরের চাষিরা। ফলে ফাও ফসল সরিষাতে বাম্পার ফলনে কৃষকরা চলতি বছরে বাজিমাত করেছে। অন্যদিকে কৃষি বিভাগের নিয়মিত তদারিক, পরামর্শে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন করে ফাও ফসল হিসেবে সরিষা চাষ বেঁছে নিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সরিষিবাড়ি, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলায় ২৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্জিত হয়েছে ৩২ হাজার ৫০০ হেক্টর। গত বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর, অর্জিত হয়েছিল ২৩ হাজার ৪০০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এ বছর সরিষার চাষ বেশি হয়েছে।

আরো জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলন শীল (উফশী) জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে কৃষি বিভাগ। এ জাতের সরিষা চাষে চাষিরা আরো অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে দাবি করছেন জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষক সরিষার আবাদ করেছে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মাত্র ৭০-৮০ দিনের মধ্যে আবাদে কৃষকদের বেশি একটা খরচও হয় না। আমন ধান উঠার পর পর জমি পতিত ফেলে না রেখে ধান কাটার পর হালচাষ না করে ওই জমিতে ছিটিয়ে সরিষার আবাদ করেন। এতে খরচের পরিমাণ খুবই কম।এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের কৃষি প্রণোদনায় সার এবং বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহের কারণে আগাম জাতের সরিষা তুলতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন জামালপুর জেলার গ্রামগঞ্জের কৃষকরা।

ফলন ভালো ও আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় বাম্পার এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন।ইসলামপুরের চাষি আব্দুস সামাদ জানান, গত বছর প্রতি মণ সরিষা ১৮ থেকে ১৯শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সয়াবিন তেলের দাম বেশী থাকার ফলে এ বছর নতুন সরিষার বাজারে কৃষকেরা ৩১ থেকে ৩২শ টাকায় বিক্রি করছে। এ বছর সরিষার চাষ পদ্ধতি খুব সহজ ও কম খরচে অল্প সময়ে আশানুরূপ ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের কৃষক হারুন গত বছর দু বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করে ফলন ভাল ভালো পাওয়া এ বছরও প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জমি থেকে সরিষার উঠাতেও শুরু করেছেন। নিজ নিজ চাহিদা মেটানোর পর বিক্রি করে অনেক লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জাকারিয়া সুলতানা জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত থাকলেও জেলায় এবার সরিষার ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়া এ জেলার প্রত্যেক উপজেলার মাটি সরিষা চাষের জন্য বিশেষ খুবই উপযোগী। সরিষা চাষিদের যথাযথ পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে কৃষি অফিস।

তিনি আরো জানান, প্রতি বছরই বাড়ছে সরিষার আবাদ। এছাড়া সরিষা উত্তোলন করে বোরো ধান চাষ করতে পারেন বলে এটাকে ‘ফাও ফসল’ বলে মনে করেন চাষিরা।