৬ কোটি টাকায় ২৩০০ কিমি নদীপথ ভ্রমণ ২৮ পর্যটকের

প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেছেন সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির ২৮ পর্যটক। এরই অংশ হিসেবে বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে এশিয়ার সেরা পুরাকীর্তি ১২০ বছরের পুরনো বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন গির্জা পরিদর্শন করে মুগ্ধ হন তারা। বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) পিরোজপুরের স্বরূপকাঠীতে পেয়ারা বাগান এবং বানারীপাড়ার ভাসমান হাট দেখতে যাবেন এসব পর্যটক।

বুধবার বিকালে নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক এলাকায় ড্রেজারবেইজড পন্টুনে প্রমোদতরি গঙ্গা বিলাস নোঙর করার পর পর্যটকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, জার্নিপ্লাস ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারী তৌফিক রহমান ও গাইড মো. কায়েসসহ বরিশাল প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এরপর পর্যটকদের মাইক্রোবাসযোগে নিয়ে যাওয়া হয় অক্সফোর্ড মিশন গির্জায়। দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন পুরাকীর্তি গির্জাটি পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় তাদের প্রার্থনা কক্ষসহ গির্জার আশপাশের এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এটি দেখে মুগ্ধ হন তারা। এ সময় গির্জার প্রতিটি স্থাপনার ছবি এবং ভিডিও ধারণ করেন। সন্ধ্যার আগে জাহাজে ফিরে যান পর্যটকরা।

পর্যটকদের গাইড জার্নিপ্লাস ট্যুরিজমের প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান বলেন, ‘বক্সার, রামনগর এবং গাজীপুর হয়ে যাত্রা শুরুর অষ্টম দিনে পাটনায় পৌঁছায় প্রমোদতরি গঙ্গা বিলাস। পাটনা থেকে মূলত কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন তারা। ২০তম দিনে কলকাতার বেনারস পৌঁছালে সেখানে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখান থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি গঙ্গা বিলাস ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও কুড়িগ্রামে যাবে জাহাজটি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে লং ট্যুর রিভার ক্রুজ।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজে সুইজারল্যান্ডের ২৭ এবং জার্মানির এক পর্যটক রয়েছেন। ৬২ মিটার লম্বা ও ১২ মিটার প্রস্থের জাহাজে ২৮টি বিলাসবহুল কামরায় তাদের অবস্থান। এজন্য প্রতি পর্যটককে দিতে হয়েছে ২০ লাখ টাকা করে। এতে সবমিলিয়ে খরচ পড়ছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। জাহাজটি পরিচালনা করছেন ভারতীয় ৪১ জন ক্রু।’

তৌফিক বলেন, ‘৫১ দিনের ট্যুরে তিন হাজার ২০০ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেওয়ার সময় বাংলাদেশ-ভারতের ২৭টি নদী ও ৫০টি পর্যটন কেন্দ্রে যাবে জাহাজটি। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখবেন পর্যটকরা। বাংলাদেশের সুন্দরবন তাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তবে বাঘ দেখতে না পেলেও পায়ের ছাপ দেখানো হয়েছে। আরও ভালো লেগেছে বাংলাদেশের নদী ও তার দুই পাড়ের সবুজ গাছপালা। বরিশালে আসার আগে বাংলাদেশের যেসব পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে এসেছেন, তার প্রতিটি উপভোগ করেছেন তারা।’

১৭ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে ভারতের আসামে ঢুকবে জাহাজটি জানিয়ে তৌফিক রহমান বলেন, ‘১ মার্চ আসামের শেষ সীমান্তে দিপড়ুগড়ে নোঙর করার মধ্য দিয়ে শেষ হবে গঙ্গা বিলাসের ৫১ দিনের সফর।’

‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন পর্যটক মিলার ও ওয়ালটার। সময় সুযোগ পেলে তারা আবার বাংলাদেশ ঘুরে দেখবেন। এজন্য তারা গঙ্গা বিলাস জাহাজ কর্তৃপক্ষ এবং জার্নিপ্লাস ট্যুরিজমের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান’ বলেছেন তৌফিক রহমান।

গঙ্গা বিলাস জাহাজের পরিচালক রাজ সিংহ বলেন, ‘২০ বছর আগে বাংলাদেশে একা এসেছিলাম। ওই সময়ের চেয়ে পর্যটকদের নিয়ে বাংলাদেশে এসে এবার অনেক ভালো লাগছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এ ধরনের ট্যুরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশ সম্পর্কে বিদেশিরা ভালোভাবে জানতে পারছেন। দেশে ফিরে দুই দেশের সম্পর্কের প্রশংসা করবেন পর্যটকরা।’

জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার বরিশাল ঘাট ত্যাগ করবেন। এ পর্যন্ত তাদের যাতে নিরাপত্তায় কোন ধরনের সমস্যা না হয়, সেজন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে। বৃহস্পতিবার পিরোজপুর গেলে সেখানেও জেলা পুলিশ নিরাপত্তায় থাকবে।’

এদিকে, ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আরিচার ইলিশ বাজারে যাবেন পর্যটকরা। ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে যাবেন। পরে সিরাজগঞ্জ হয়ে টাঙ্গাইলে যাবে গঙ্গা বিলাস। ১২ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামের চিলমারী ভ্রমণ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি চিলমারীতে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি যাবে রংপুর। রংপুরের পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে ১৫ ফেব্রুয়ারি চিলমারী ক্রস করে ভারতের আসামের ধুবরির উদ্দেশে রওনা হবে গঙ্গা বিলাস।