বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে মেহেরপুরে

২০১৮ সাল থেকে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে বীজ উৎপাদনের জন্য প্রতি বছরই চাষ করা হয় সূর্যমুখীর। মেহেরপুরের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খায় এমন জাত কৃষদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে কিছুটা সফলতাও এসেছে।

গত ৪ বছরে মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ বেড়েছে কয়েকগুন। চলতি মৌসুমে আমঝুপি বীজউৎপাদন খামারে ২ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এর আগে শুধু বিএডিসি চাষ করলেও এখন জেলার প্রায় শতাধিক বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখীর। খরচ ও সময় কম লাগায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষদের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেহেরপুর ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন খামারের উপপরিচালক কৃষিবিদ সঞ্জয় কুমার দেবনাথ জানান, তৈলজাতীয় ফসল তথা সূর্যমুখীর আবাদ বাড়াতে মেহেরপুরের ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন খামারে বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। ১৫টি হাইব্রিড ও ২টি ইনব্রিডসহ মোট ১৭টি দেশি ও বিদেশি স্যাম্পলের মধ্যে ১৪টি জাতের সূর্যমুখীর উৎপাদনশিলতা পরীক্ষার জন্য ট্রায়াল প্লট স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন- যে জাতগুলোর ফলন ভালো পাওয়া যাবে সেগুলো আগামী বছর উৎপাদনের জন্য বাজারে ছাড়া হবে। আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নত জাতের তৈল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিএডিসির পক্ষ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে সূর্যমুখির চাষ দেখে অনেকেই শুরু করেছেন চাষটি।

সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার তেমনি একজন কৃষক। তিনি শখের বসে গত বছর ২ কাঠা জমিতে চাষ করেছিলেন। তেল ও জ্বালানি পাওয়ায় এ বছর ১ বিঘা আবাদ করেছেন। তিনি জানান, সূর্যমুখীর আবাদের একদিকে যেমন তৈলবীজ পাওয়া যায় অন্যদিকে গাছগুলো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

নিজে খাওয়ার জন্য কিছু বীজ রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেব। বিঘা প্রতি ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হয়। এতে সার-পানি কম লাগে। তিন মাসেই বীজ পাওয়া যায়। বিঘা ৬-৭ মন বীজ পাওয়া যায়।

আমঝুপি বিএডিসির ডাল ও তৈল বীজ বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম নূরুল ইসলাম জানান, সূর্যমুখী বীজ থেকে ৪২-৪৫ শতাংশ তেল পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য অন্য তেলের তুলনায় দেড় থেকে দ্বিগুন বেশি। অন্যদিকে সূর্যমুখী তেল শরীরের জন্য উপকারী ভিটামিন এ, বি ও ই-এর সঙ্গে বিশেষত ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক এসিড বিদ্যমান থাকে। নুরুল ইসলামের মতে দেশে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ালে আমদানিকৃত ভোজ্য তেলের উপর চাপ কমবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মেহেরপুরের ডাল ও তৈল বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক কৃষিবিদ জিয়াউর রহমান বলেন, সূর্যমুখীর বীজ সহজ প্রাপ্য করার জন্য গোডাউনসহ বিএডিসির ২২টি আঞ্চলিক বীজ সংরক্ষণাগারে বীজ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা বিএডিসির নিবন্ধিত ৮২৫৬ জন ডিলারের মাধ্যমে চাষি পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরিন পারভিন বলেন, মেহেরপুরে চাষিরা সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। এ ব্যাপারে মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।