রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে- যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ঘটনায় দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। আর এ সময় একটি ওয়ান শুটারগান ও বিপুল পরিমাণ গোলা বারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে ৮ ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৪০ বস্নকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে তখন পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের সেটি যেমন বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
উলেস্নখ্য, কক্সবাজার এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে কীভাবে কী পরিমাণ মাদকের চোরাচালান বেড়েছে তার পরিসংখ্যানও এর আগে আলোচনায় এসেছে। কেননা, এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের বাহক ও চোরাচালানকারী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছিল। মাদকের হাব হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা এলাকাকে- এটিও সামনে আসে। আমরা মনে করি, যখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নানা আঙ্গিকে বাড়তি চাপ ও ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। এ কথাও বলা দরকার, এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে এটাও স্পষ্ট হয়, রোহিঙ্গা সংকট ক্রমাগত আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশারবাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি- এমন বিষয়ও বারবার আলোচনায় এসেছে। এছাড়া এটাও আমলে নেওয়া দরকার, পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে- এ ধরনের আশ্বাসও বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। ফলে যেভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে তাতে সংকট আরও গভীর হচ্ছে। স্মর্তব্য, এর আগে এই আলোচনাও সামনে এসেছিল যে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে এবং এই সমস্যা সমাধানে বন্ধুরাষ্ট্রের দ্রম্নত সহযোগিতা দরকার। না হলে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ সংকটে পড়বে।
আমরা বলতে চাই, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে যখন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে এবং মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তখন বিষয়টি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে যত দ্রম্নত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ নিতে হবে। এমনিতেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নানা আঙ্গিকে বাড়তি চাপ ও ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ। আবার যদি বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটতে থাকে তবে তা উদ্বেগের। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের ভার বহন করতে গিয়ে এই চাপ নিতে হচ্ছে। কোনো ধরনের মাদক উৎপাদন না করেও বাংলাদেশই এর ভুক্তভোগী- এটাও এর আগে খবরে উঠে এসেছে।
লক্ষণীয় যে, জানা গিয়েছিল মাদক চোরাচালান, অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে সীমান্তে এবং রোহিঙ্গা এলাকায় বেড়েছে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের সংখ্যাও। এমন বিষয়ও সামনে আসে, সিনথেটিক ড্রাগস আসছে সীমান্ত দিয়ে। যেখানে বাহক হিসেবে কাজ করছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে বলেও জানা গিয়েছিল। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মিয়ানমারই রোহিঙ্গা ক্রাইসিস তৈরি করেছে আর তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি ছিল এর সমাধান করা। ফলে মিয়ানমার রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে এমনটি কাম্য। মনে রাখা দরকার, প্রায় ১৭ কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চাপ আর কতদিন সইতে হবে- এই প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। যা আন্তর্জাতিক মহলকে ভাবতে হবে।
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের আজীবন রাখতে হবে। এটা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। আর যেভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, সেটাও আমলে নিতে হবে। বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলসহ সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে এমনটি কাম্য।