শীতকালীন সবজির উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে

গত অর্থবছরে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ২৪ শতাংশ। এরপর ২ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের সবজি গেছে মালয়েশিয়ায়, যা মোট রপ্তানির ২০ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল চার কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এক দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় প্রায় চার গুণ বেড়েছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, নেপাল, ব্রম্ননাই, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি হয়।

খাদ্যের উপাদানের মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেলসের অন্যতম উৎস হলো শাকসবজি। শীতের শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব দূর হয়। নিয়মিত শাকসবজি গ্রহণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শাকসবজিতে থাকা আঁশ যেমন হজমে সাহায্য করে তেমনি ক্যানসারসহ অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি-এর উৎকৃষ্ট উৎস এই শাকসবজি। দেশে প্রায় ২০০ ধরনের সবজি চাষ হয়। সবজি উৎপাদনে এখন বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। চীন প্রথম ও ভারত দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

শীতকালীন সবজির উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, দেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার টন সবজি উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার টন। উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি রপ্তানি বাড়ছে প্রতি বছর। গত অর্থবছরে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ২৪ শতাংশ। এরপর ২ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের সবজি গেছে মালয়েশিয়ায়, যা মোট রপ্তানির ২০ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল চার কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এক দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় প্রায় চার গুণ বেড়েছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, নেপাল, ব্রম্ননাই, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি হয়।

গত ১৫ বছরে দেশে সবজি চাষে নীরব বিপস্নব ঘটে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ বেড়েছে। উৎপাদনও বাড়ছে প্রতি বছর। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারের জন্য সবজি উৎপাদন করছেন চাষিরা। ভালো লাভও পাচ্ছেন। ফলে শিক্ষিত তরুণরাও ঝুঁকছেন সবজি চাষে। এক সময় দেশের বিশেষ কয়েকটি জেলাতে বড় পরিসরে সবজির চাষ হতো। বর্তমানে সব জেলাতেই সারা বছর সবজির চাষ হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। আলু, টমেটোর মতো সবজি প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত হচ্ছে। আলু থেকে চিপস, টমেটো থেকে সস বা কেচাপ তৈরি হচ্ছে। এ জন্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানি চুক্তিভিত্তিক চাষ করাচ্ছে। রপ্তানি বাড়াতে সরকারও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। রপ্তানিযোগ্য সবজি ও ফলমূল রাজধানীর শ্যামপুরের বিসিক শিল্পনগরীতে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে বাছাই করে প্যাকেটজাত করা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে পৌনে দুই কোটি কৃষক পরিবার রয়েছে। এসব পরিবার কমবেশি সবজি চাষ করে। বাড়ির উঠান বা খালি জায়গা, জমির পাশের উঁচু স্থান, আইল, টিনের চাল এবং পুকুরে মাচা দিয়ে কৃষকরা সবজির চাষ করছেন। ফলে মোট কৃষিজমির পরিমাণ কমলেও সবজি চাষ বেড়েছে। বর্তমানে দেশের মানুষ গড়ে মাথাপিছু ২০০ গ্রাম সবজি খান- যা ১০ বছর আগে ছিল ১০০ গ্রামের কম। আগামীতে এই পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ, একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যত হবে, সবজি ও ফল খাওয়ার প্রবণতা ততটা বাড়বে। বছরের প্রায় সব সময় কমবেশি শাকসবজি ও ফলমূল হয়ে থাকে। তবে ষড়ঋতুর আবর্তে বাংলাদেশে শীতকালই শাকসবজি ও ফলমূলের জন্য উপযুক্ত সময়। শীতকালে এসব মৌসুমি শাকসবজি বা ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ সম্ভব। তাছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালের শাকসবজি এবং ফলের স্বাদ ও পুষ্টি বেশি থাকে। প্রায় সব শাকসবজিতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান- যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে। এ ছাড়া প্রায় সব শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে- যা দেহের পানির ঘাটতি পূরণে সক্ষম।

শীতের সময় বাজারে বেশি দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, লাউ, ব্রোকলি, মোটরশুঁটি, গাজর, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি। পুষ্টিবিদদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন। অস্থিক্ষয় রোধে ও শরীরে রক্তকণিকা গঠনে শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই এর ঘাটতি পূরণে খেতে হবে বেশি বেশি শীতকালীন শাকসবজি। শীতকালীন শাকসবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ই- যা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং চুলপড়া রোধ করে।

শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রায় সবারই পছন্দের। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটমিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড ও পানি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার রয়েছে- যা কিডনির পাথর গলায় ও ক্যানসার নিরাময়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। ফুলকপিতে কোনো চর্বির মাত্রা নেই। ফুলকপি তাই কোলেস্টেরোলমুক্ত- যা কিনা শরীরের বৃদ্ধি ও বর্ধনে বিশেষ উপযোগী। পাশাপাশি বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন-সি ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে এবং ওজন কমাতে বাঁধাকপির জুড়ি নেই। তাছাড়া বাঁধাকপি আলসার প্রতিরোধে সক্ষম। পুষ্টিগুণে লালশাক ও পালংশাক অন্য শাকগুলোর তুলনায় একটু এগিয়ে। প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে রয়েছে প্রায় ৩৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম; অন্যান্য পুষ্টিগুণও অন্য শাকের তুলনায় লালশাকে বেশি। আর পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, আয়রন ও ফলিক এসিড- যা আমাদের দেহের জন্য জরুরি। পালংশাক আমাদের শরীরে আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ ছাড়াও হৃদরোগ এবং কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

শীতকালীন সবজি মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি; প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় ১২৫ কিলোক্যালরি। উদ্ভিজ আমিষের বড় ভান্ডার হলো শিম। শিমে আমিষ ছাড়াও স্নেহ ও ফাইবারজাতীয় খাবার অংশ থাকে। শিমের আঁশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। রক্তে কোলেস্টেরোলের মাত্রা কমায়- যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলীতে শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূর করে এবং পুষ্টি প্রদান করে থাকে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে উন্নত দেশের লোকজন টমেটো ও টমেটোজাত খাদ্য, পালংশাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাবার প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকে। ক্যালরিতে ভরপুর টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি- যা মানবদেহের হাড় ও দাঁত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।