কৃষি জমিতে আদা চাষের পাশাপাশি এবার ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় কৃষকরা বস্তা পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ শুরু করেছেন। কৃষকরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে আবাদের ঝক্কি কম। বাসাবাড়ির আশপাশসহ পতিত জায়গায় এবং সাথি ফসল হিসেবে ছায়াযুক্ত স্থানেও এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করা যায়। শুধু তাই নয়, বস্তা পদ্ধতিতে আবাদে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি থাকে কম, ফলে ফলনও পাওয়া যায় ভালো। এ কারণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে, বিশেষ করে পুটিজানা ও এনায়েতপুরে কৃষকদের পাশাপাশি অন্য শ্রেণি-পেশার মানুষও বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষের সুবিধার কথা জানিয়ে কৃষকরা বলেন, মাটিতে আদা চাষ করলে ঘাস বেশি জন্মায়, মাটি শক্ত হয়ে যায়। ফলে আদার বিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফলন কমে যায়। অন্যদিকে বর্ষাকালে মাটিতে পানি জমে আদা পচে যায়। এর বিপরীতে বস্তায় মাটি নরম থাকে, ঘাস কম হয়। বস্তায় ছিদ্র থাকায় পানি জমে না, স্যাঁতসেঁতে হয় না, ছত্রাক ও রোগবালাই কম হয়, আদা পচে না। ফলে জমিতে চাষাবাদের চেয়ে বস্তায় আদার ফলন অনেক বেশি হয়।
পুটিজানা ইউনিয়নের বেড়িবাড়ি গ্রামের কৃষক শংকর চন্দ্র পাল দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমার ৩০ শতাংশ পতিত জমিতে প্রায় ছয় হাজার বস্তা আদা চাষ করেছি। বস্তা, আদা, জৈব রাসায়নিক ও পরিচর্যাসহ প্রতি বস্তায় প্রায় ৩২ টাকা খরচ হয়েছে। বস্তায় দুই কেজি করে আদা উৎপাদিত হলে ৬ হাজার বস্তা থেকে প্রায় ১২ হাজার কেজি আদা পাওয়া যাবে।
এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, বস্তায় চাষ করা আদা গাছগুলো বেশ হৃষ্টপুষ্ট, রোগবালাই নেই। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আদার দাম ন্যূনতম ৬০ টাকা। ৬০০ বস্তায় ১২০০ কেজি আদা উৎপাদন ধরে ৭২ হাজার টাকা বিক্রি এবং ৫০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
মোরশেদ নামে স্থানীয় এক বিক্রেতা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমার কোনো জায়গাজমি নেই। অন্যের গাছতলায় সাথি ফসল হিসেবে ৮ শতাধিক বস্তায় আদা চাষ করেছি। ফলন ভালো হলে বেশি করে বস্তায় আদা করব। যাদের আবাদি জমি নেই তারা ইচ্ছা করলে বসতবাড়ির আশপাশে, বাড়ির আঙিনায় অথবা অন্য পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার জানান, সিমেন্ট বা আলুর বস্তায় আদার আবাদ করা যায়। এ পদ্ধতিতে মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়েও নেয়া যায় সহজে। বাড়ির উঠানসহ যেকোনো ফাঁকা জায়গা এবং ছাদেও আদার বস্তা রাখা যায়। ফলে আলাদা করে জমি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আবার ছায়াযুক্ত স্থানে বেশিরভাগ ফসলের আবাদ করা না গেলেও বস্তা পদ্ধতিতে সেখানেও আদা চাষ করা যায়।
জেসমিন নাহার বলেন, ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। এ বছর প্রথম বেশকিছু কৃষক বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তাদের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মতিউর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘জমি ছাড়াই বস্তায় যে আদা চাষ করা যায় সেটি অনেকেই জানেন না। অথচ বস্তায় চাষ করলে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। একটি ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যায়। ফলে খরচ একেবারেই কম। একেকটি বস্তায় তিনটি গাছ থেকে দুই কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া সম্ভব।