প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আজ বলেছেন, শতভাগ মানুষকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সেবার আওতায় নিয়ে আসার অংশ হিসেবে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে ক্যাশলেস সমাজ প্রতিষ্ঠা সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি ক্যাশলেস সমাজ প্রতিষ্ঠা।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেশন প্লাটফরম (আইডিটিপি) ‘বিনিময়’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জয় বলেন, বর্তমানে প্রায় ৫/৬ কোটি গ্রামবাসীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও জয়লাভ করতে পারে, তবে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে এবং সরকারের পরবর্তী মেয়াদে তারা ক্যাশলেস সমাজে বাস করবেন।
সজীব বলেন, নেটওয়ার্ক সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে, সরকারের সেবা ডিজিটালাইজড হয়েছে, প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে, বাংলাদেশে বৃহৎ আইটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এখন দেশেই ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন সেট ও কম্পিউটার মেমোরি চিপস উৎপন্ন হচ্ছে এবং এগুলো রফতনি শুরু হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশকে ডিজিটাল করার পরিকল্পনা ছিল। তখন এদেশে ডিজিটালের কিছুই ছিল না। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করতে চেয়েছিল, তবে জটিলতার কারণে বাংলাদেশ সে পথে যায়নি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজেরা করেছি। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিটি পদক্ষেপই বাংলাদেশের নিজের। কোনো বিদেশি দাতা সংস্থার নয়।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইন্টারনেট ছিল। নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্টাকচার করা ছিল আমাদের প্রথম কাজ। ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার অপটিক নিয়েছি। এটার জন্য সারাবিশ্বে প্রশংসা পেয়েছি। গ্রামের মানুষের কাছে তো স্মার্টফোন নেই তারা ডিজিটাল প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করবে? তখন পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে এক বছরের মধ্যে ডিজিটাল সেন্টার বানানো হয়েছে। এরপর সরকারি সেবা ডিজিটাল করা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সরকারি সব সেবা শতভাগ ডিজিটাইজ করা আমাদের লক্ষ্য। এখানেও কোনো বিদেশি সংস্থা নেই।
তিনি আরও বলেন, বিদেশিরা ভেবেছিল তারা আমাদের ডিজিটাল করতে কী সমস্যা সেসব বলে দেবে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব। কিন্তু আমাদের মেধা আছে। আইটি আমরা জানি, বাংলাদেশকে ডিজিটাইজ আমরাই করেছি। আমরা সমস্যা চিহ্নিত করে নিজেরাই সমাধান করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আইটি ইন্ডাস্ট্রি বানানোর লক্ষ্যে বছরে ৪০/৫০ হাজার নাগরিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন দেশে ভালো আইটি সেক্টর তৈরি হয়েছে। আমরা নিজেরাই সব করতে পারছি। দেশের ভেতর সরকারি-বেসরকারি খাতে আইটির যেসব কাজ চলছে অধিকাংশ বাংলাদেশি কোম্পানি সেখানে সার্ভিস দিতে পারছে। বিদেশ থেকে কোম্পানি আনতে হচ্ছে না, ডলারও খরচ হচ্ছে না। কোনো দেশ টেকনোলজিতে এত দ্রুত উন্নতি করেনি।’
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ডিজিটাল সেবার অন্যতম ধাপ ক্যাশলেস। আমাদের দেশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনও ক্যাশে লেনদেন করে। এখানে ঝুঁকি থাকে। সারাক্ষণ ক্যাশ হাতে রাখা যায় না। দুর্নীতি, সন্ত্রাসে লেনদেন চলে আসে যতক্ষণ ক্যাশ লেনদেন চলে। এজন্য ক্যাশলেস সোসাইটি আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ইন্টারঅপারেবল লেনদেন প্লাটফর্ম বিনিময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সেবা। এখানে লেনদেন যত বাড়বে তত ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে আমরা এগুতে পারব।
এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মেজবাউল হক এই প্লাটফর্মের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করে একটি উপস্থাপনা পরিবেশন করেন।