বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত প্রগ্রামিংয়ের ‘বিশ্বকাপ’ খ্যাত ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রগ্রামিং কনটেস্টে (আইসিপিসি) অংশ নেওয়া দেশি আটটি দলের মধ্যে সেরা হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দল বুয়েট নার্ডহার্ড। বিশ্বের ৪৭টি দেশের ১৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তারা হয়েছে ৫১তম। এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাদের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছেন মানজুর হোছাইন মাহি।
যেভাবে প্রতিযোগিতায়
বুয়েটের দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বুয়েটের নিজস্ব একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটি এ রকম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য বুয়েটের দল নির্বাচনের জন্য সব কিছু তদারকি করে। কোচিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের একক ও দলগত অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি দল নির্বাচন করে এই কমিটি। বুয়েটের এবারের দলে কোচ হিসেবে ছিলেন কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহেল রহমান।
আর প্রতিযোগীরা হলেন বুয়েট ১৭ ব্যাচের ইফতেখার হাকিম কাওসার ও অপূর্ব সাহা এবং বুয়েট ১৮ ব্যাচের নোশিন নাওয়াল।
প্রতিযোগিতার ধরন
প্রতিযোগিতাটির ধরন নিয়ে বুয়েটের দলটি জানায়, অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে যে এটি একটি কোডিং প্রতিযোগিতা। কিন্তু এটি শুধু কোডিং প্রতিযোগিতা নয়। এ প্রতিযোগিতায় প্রথম কাজ হলো সমস্যা সমাধান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিযোগিতায় দেওয়া সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হয়। এরপর সেটির কোডিং, ডিকোডিং করে সাবমিট করতে হয়। এই ধরনের সমস্যা সমাধান করার চ্যালেঞ্জের কথা মাথা রেখেই প্রতিযোগীরা এ রকম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকেন।
এবারের ফলাফল
মস্কোতে গতবারের ৪৪তম আইসিপিসি প্রতিযোগিতায় ভারত, ইরানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দলকে টপকে এশিয়া ওয়েস্ট অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বুয়েট। এবারের প্রতিযোগিতায় বুয়েট এশিয়া ওয়েস্টের মধ্যে তৃতীয় এবং বিশ্বের মধ্যে ৫১তম হয়েছে। ১২টি সমস্যার মধ্যে বুয়েট এবার চারটি সমস্যার সমাধান করতে পেরেছিল।
এশিয়া ওয়েস্ট অঞ্চলের মতো আইসিপিসি মোট আট অঞ্চল রয়েছে।
এমন ফলাফলের কারণ
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও তুলনামূলক কম প্রস্তুতি থাকার কারণে এবার বুয়েট এশিয়া ওয়েস্টের চ্যাম্পিয়নের জায়গা ধরে রাখতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বুয়েটের দলের সদস্যরা। দলের কোচ অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহেল রহমান বলেন, ‘গতবারের প্রতিযোগিতায় যে দল বুয়েট এশিয়া ওয়েস্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই দলের তিনজনের মধ্যে দুজনের আগেও বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ছিল। সেই অভিজ্ঞতা অনেক বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এবারের প্রতিযোগীদের এ রকম কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতার আগে এক মাস ধরে প্রতিযোগীদের একাডেমিক ফাইনাল পরীক্ষায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এর কারণে প্রতিযোগীরা ঠিকভাবে অনুশীলন করতে পারেনি। তাই প্রস্তুতিতে একটু ঘাটতি ছিল বৈকি। পাশাপাশি আইসিটি ডিভিশন থেকে যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেটি যদি আরো আগে করা যেত তাহলে প্রতিযোগীরা আরো ভালো করতে পারত। ’
প্রতিযোগীদের অভিজ্ঞতা
এ রকম একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে ভালো লেগেছে এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি কনটেস্ট কালচারসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রতিযোগীরা। তাঁদের আরো ভালো করার সুযোগ ছিল বলেও মনে করেন তাঁরা। অপূর্ব সাহা বলেন, ‘আমাদের সামনে ভালো সুযোগ ছিল এশিয়া ওয়েস্ট রিজিওনাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার, যা কিনা এবার আইআইটি কানপুর ৪৯তম হয়ে অর্জন করে। আমরা একটা প্রবলেম স্টেটমেন্ট বুঝতে কিছুটা ভুল করেছিলাম। আর ভুলটা বুঝেছি কনটেস্ট শেষ হওয়ার একটু আগে। যদি আমরা আরেকটা প্রবলেম বেশি সলভ করতে পারতাম তাহলে ওদের পিছে ফেলে দিতে পারতাম। ’
এই প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনে আরো ভালো করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিযোগীরা। ইফতেখার হাকিম কাওসার বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ফাইনালের প্রেশার বাকি যেকোনো জাতীয় প্রতিযোগিতা থেকে অনেক বেশি থাকে। এটি আমাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। এই প্রতিযোগিতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী প্রতিযোগিতাগুলোতে আরো ভালো করার চেষ্টা করব। ’
অন্যদের জন্য পরামর্শ
যারা এমন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চায় তাদের জন্য বুয়েটের দলের পরামর্শ হলো, বেশি বেশি অনুশীলনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ দক্ষতা বৃদ্ধি করা। বেশি করে প্রগ্রামিং করতে হবে এবং বেশি করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। তবে সব কিছুই করতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে।