ঢাকঢোল বাজিয়ে ছন্দের তালে তালে লাঠির বিভিন্ন ধরনের কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন লাঠিয়ালরা। খেলা দেখে যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ মুগ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) যশোর শহরের ঐতিহ্যবাহী টাউন হল ময়দানে লাঠিখেলা দেখে দর্শকদের চোখেমুখে মুগ্ধতার ছাপ দেখা গেছে।
যশোর ইনস্টিটিউটের প্রাণপুরুষ খ্যাত রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের ১৬৪তম জন্মদিন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী স্মরণ উৎসব উপলক্ষে এই লাঠিখেলার আয়োজন করে যশোর ইনস্টিটিউট। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী খেলা উপভোগ করতে মাঠের চারদিকে সমবেত হন হাজারো দর্শক। এতে কুষ্টিয়ার বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর ৫০ জন সদস্যের একটি দল নৃত্যের তালে তালে লাঠিয়ালরা প্রদর্শন করতে থাকেন নানা কসরত। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে সুরক্ষা আর প্রতিপক্ষকে কাবু করতে মেতে ওঠেন লাঠিয়ালরা।
খেলার শুরুতে বাদ্যের তালে তালে ঘোরে লাঠি। এরপর শুরু হয় লাঠিয়ালদের কেরামতি। শক্ত হাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ভেলকি দেখান তারা। ২ লাঠি, ৪ লাঠি, শর্কি খেলা, তলোয়ার খেলা, ছুরি খেলাসহ আরও অনেক খেলা দুই দলে বিভক্ত হয়ে প্রদর্শন করেন লাঠিয়ালরা। এর মধ্যে একদল শিশু ছিল। লাঠিখেলায় বড়দের শক্ত হাতের বিপরীতে ছোটরাও কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই সেটির প্রমাণ দিয়েছে তারা।
খেলায় অংশ নেওয়া সদস্যরা জানান, এই খেলায় জয়-পরাজয় মুখ্য নয়। দর্শকদের বিনোদন দেওয়াই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। ঐতিহ্যবাহী এই খেলা দেখতে আগ্রহের কমতি ছিল না শহরবাসীর। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী লাঠিয়ালদের অপূর্ব কৌশল দেখে মুগ্ধ হয় শহরের দর্শক।
যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মী প্রণব দাস বলেন, ‘দর্শকদের আগ্রহ আর ভালোবাসায় এখনো বেশ কিছু খেলোয়াড় এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলা ধরে রাখতে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি প্রশাসন ও আয়োজকদের উদ্যোগ নিতে হবে।
লাঠিখেলা দেখে আপস্নুত কলকাতা থেকে আসা রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য কবি ও সাহিত্যিক ডা. গৌরব দীপ ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, ‘সনাতনী এই খেলা আমরা কিন্তু এখন দেখতে পাই না। বহুদিন আগে খেলাটি দেখেছি। সেটা আমার স্মৃতিতে নেই। আজ খেলাটি দেখেছি অনেক ভালো লাগল।’ দুই বাংলার এই জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খেলা বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন তিনি।
লাঠি দলের দলনেতা মিজানুর রহমান জানান, তারা বিভিন্ন জায়গায় লাঠিখেলার প্রদর্শনী করে থাকেন। এ খেলার মাধ্যমে লোকদের যেমন আনন্দ দেন তেমনি নিজেরাও আনন্দ পান। কিন্তু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে লাঠিখেলার আয়োজন করা হলে তাদের অনেক লোকসান হয়। তাই লাঠিখেলাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে সরকারি সহায়তার দাবি জানান তারা।
এদিকে, রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের ১৬৪তম জন্মদিন উপলক্ষে এদিন বিকালে সপ্তাহব্যাপী স্মরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য্য এমপি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যশোর ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অসিত বরণ ঘোষ, রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য কবি ও সাহিত্যিক ডা. গৌরব দীপ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।
আয়োজন সম্পর্কে যশোর ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু বলেন, ‘রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার পরিবারের ১৬৪তম জন্ম ও ৯০তম মৃতু্য দিবস উপলক্ষে স্মরণ উৎসবের আয়োজন করেছে যশোর ইনস্টিটিউট। এই উৎসব প্রাণবন্ত করতে আয়োজন করা হয় লাঠিখেলা।