উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত সিলেটের দীর্ঘতম রানীগঞ্জ সেতু

উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ও সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম রানীগঞ্জ সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি যে কোনো দিন সেতুটি উদ্বোধন করতে পারেন বলে আভাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ সেতু চালু হলে সুনামগঞ্জবাসীকে আর সিলেট হয়ে ঘুরে ঢাকা যেতে হবে না। পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে দ্রুত সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন তারা। ফলে সুনামগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৫২ কিলোমিটার। সময় বাঁচবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজতর হলে প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায় ছোট-বড় অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, এ সেতু সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এর সুফল ভোগ করবে বলে জানান মন্ত্রী।

এলাকাবাসী জানান, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতার এলে সড়কের রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্যাগ নেয়া হয়। ২০১৭ সালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৭০২ মিটার দীর্ঘ ও ১০.২৫ মিটার বক্স গার্ডার সেতুটি সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে পরিচিত। সুনামগঞ্জ ও আউশকান্দির মধ্যস্থল জগন্নাথপুর উপজেলা হয়ে উঠবে অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা। এরইমধ্যে রানীগঞ্জ সেতুর পূর্বপাড়ে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের বিষয়টি অনুমোদন লাভ করেছে। সেতুর পশ্চিমপাড়ে একটি ইকোনমিক জোন প্রতষ্ঠার কাজ চলছে।

সূত্রমতে, দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের শেষ জেলা সুনামগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরী হয়ে যেতে হয়। ১৯৯৮ সালে এ সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে সুনামগঞ্জের পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু হয়। প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের চেষ্টায় কাজ শুরু হলেও ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সড়কের কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের চেষ্টায় আবারও সড়কের কাজ শুরু হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে সড়কের ৫২ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করা হয়।

রানীগঞ্জ সেতু সুনামগঞ্জের উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেবে জানিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব জানান, এটি সুনামগঞ্জবাসীর কাছে পদ্মা সেতুর মতো। স্বপ্নের দৃশ্যমান এ সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড কোম্পানি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ বন্ধ ছিল কিছু দিন। সেতুর কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হারুণ রশীদ জানান, চায়না কোম্পানি করোনা পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ায় সময়মতো সেতুর কাজ শেষ করা যায়নি। পরে আমরা সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করি। তিনি বলেন, বক্স গার্ডার এই সেতুতে ১৫টি স্পেন ও ১২টি পিয়ার রয়েছে।

সওজ সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ সেতুর উদ্বোধন নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে অন্যরকম আবেগ-অনুভূতি কাজ করছে। সেতু উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।