কারিগরি শিক্ষা ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির উপায়

উন্নয়নশীল বিশ্বে কারিগরি ও কর্মোপযোগী শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক। একটি দেশের শিল্প উন্নয়নের জন্য কারিগরি জ্ঞানে শিক্ষিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী তৈরির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমগ্র পৃথিবীতে যে দেশ যত বেশি দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, সে দেশ তত বেশি শিল্পোন্নত। কারিগরি শিক্ষা না থাকলে জনশক্তিকে পুর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে জনশক্তিকে শিল্পবান্ধব জনশক্তিতে রূপান্তরের বিকল্প নেই।

উপযুক্ত ও কর্মমুখী শিক্ষা না থাকলে কোনো দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সাপেক্ষেও অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করা যায় না। একইভাবে প্রচুর জনশক্তি থাকলেও কারিগরি প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা না থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই বিপুলসংখ্যক জনশক্তিকে উপযুক্ত কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্যমে উত্পাদনমুখী কাজে ব্যবহার করতে পারলেই সেই রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে তারা।

শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে তা বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে একটি কর্মে নিযুক্ত হতে পারে, তা-ই কারিগরি শিক্ষা। আবার দক্ষতা উন্নয়ন বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে যে কর্মে প্রবেশ করে, তা-ই হলো দক্ষতা বৃদ্ধি বা প্রশিক্ষণ। সমগ্র পৃথিবীতে একমাত্র কারিগরি শিক্ষাগ্রহণের পর পেশা বা চাকরির ক্ষেত্র নির্বাচন করার প্রয়োজন হয় না, কারণ সে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ। সে তার অর্জিত দক্ষতার সঙ্গে মিল রেখে পেশা নির্বাচন করতে পারে। সাধারণত আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে কর্মের কোনো মিল থাকে না। কিন্তু কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ মিল থাকে। এতে কর্মীর কর্মদক্ষতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আমাদের দেশের শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শক্তিতে রূপান্তর করে দেশের উন্নয়নে ও বিদেশে উচ্চ বেতনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রের শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনের উন্নতির শীর্ষ শিখরে অবস্থান করতে পারে। দক্ষতা বৃদ্ধি ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা চাকরির পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে ছোট ছোট শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

আমাদের দেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যা হচ্ছে আমাদের অন্যতম জাতীয় সম্পদ। দেশের এক-তৃতীয়াংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্পতম সময়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শ্রমবাজারের মূল স্রোতে নিয়ে আসা সম্ভব। আমাদের দেশের জনশক্তির একটি বড় অংশই হচ্ছে বয়সে তরুণ আর এটাকে কাজে লাগাতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। আমাদের দেশের বিদেশগামী লোকের অধিকাংশই অনভিজ্ঞ থাকে, এতে করে তারা নিম্ন বেতনে কর্মরত হয়। এই অভিবাসী শ্রমিকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকার আয়-উন্নতির ব্যাপক পরিবর্তন করা সম্ভব। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হলো অভিবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো, এটাকে আমরা কয়েক গুণ বাড়াতে পারি শুধু দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে। এতে আমাদের দেশের ও অভিবাসী শ্রমিকদের আয় বহুগুণে বেড়ে যাবে। পৃথিবীর অনেক দেশ কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে আমাদের চাইতেও তাদের জিডিপি অনেক গুণ বেড়েছে। অথচ তারা পূর্বে আমাদের চেয়েও নিম্নগামী অর্থনীতির দেশ ছিল।

আশার কথা হলো, আমাদের বর্তমান সরকার ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এই কারিগরি শিক্ষাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থা। আমরা অতি দ্রুত সফলতা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার কারণে দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র্যসীমার মধ্যে বসবাস করছে। আর এই সময়ে যদি কারিগরি শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা যায়, তাহলে কিছুটা হলেও দেশ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়