আধুনিক রাষ্ট্র ও যোগ্য নেতার ভূমিকা

আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রসমূহের অভু্যদয় গত তিনশ’ বছরের মধ্যে ঘটেছে। তবে বেশির ভাগ রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে উনিশ এবং বিশ শতকে। স্বাধীনতার পর্বটি সংগঠিত হয়েছে পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। মূলত ঔপনিবেশিক শক্তির দখল থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় এসব ভূখন্ডের মূল জনগোষ্ঠীর আন্দোলন, সংগ্রাম এবং সশস্ত্র পন্থায় যুদ্ধ করে বিদেশিদের হটিয়েছে, স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে ব্রিটিশ উপনিবেশকে হটিয়ে। এর দক্ষিণে বিশাল ভূখন্ডে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউরোপীয় স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ও ফরাসি দখলদারদের বিদায় জানিয়ে। ইউরোপে জার্মান ও ইতালি রাষ্ট্রের অভু্যদয় ঘটেছে সংগ্রাম ও কূটনৈতিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এসবই ঘটেছে আঠারো ও উনিশ শতকে। বিশ শতকে রুশ বিপস্নব, পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা, এশিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত এবং সন্নিকটের বিশাল আফ্রিকা মহাদেশের ভূখন্ডে নতুনভাবে উদিত হয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থার। সব মিলিয়ে পৃথিবীতে এখন প্রায় দুশ’র মতো স্বাধীন রাষ্ট্র। এসব রাষ্ট্রের উত্থানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক নেতা, গোষ্ঠী ও শক্তির নেতৃত্ব ইতিহাসের এক অমোঘ নিয়মে পরিণত হয়েছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই পর্বের রাষ্ট্রের অভুু্যদয়ের সঙ্গে জনগণ ও নেতার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য ছিল।

উন্নয়নশীল বেশির ভাগ রাষ্ট্রই এখন নেতৃত্বের সংকট ও অভাবে বিচ্ছিন্নতায় ভুগছে। উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহ সার্বজনীন বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে বেড়ে ওঠা, গড়ে ওঠা নেতৃত্বের অভাবে রয়েছে বললে বেশি অতু্যক্তি করা হবে না। বিশ্ব এখন দাবি করছে গেস্নাবাল পর্বের। অথচ গেস্নাবাল দৃষ্টিভঙ্গির নেতৃত্বের অভাব প্রায় সর্বত্রই। এটি একটি কঠিন সময়- যা সমকালীন বিশ্ব ইতিহাসকে ভয়ানক বির্পযয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। একুশ শতকের বিশ্ব আগের শতকের বিশ্ব থেকে অনেক বেশি পরিবর্তিত। এর যেমন রয়েছে বিকাশের অপার সম্ভাবনা, একই সঙ্গে রয়েছে উন্নয়ন, অগ্রগতিরই শুধু নয়, টিকে থাকার ভয়ানক সংকটও। কেননা, পৃথিবী এখন চতুর্থ শিল্পবিপস্নবের দারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। অথচ এই সময়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু, বায়োটেকজনিত মানব ও প্রাণিজগতের অস্তিত্বের সংকট, ইকোসিস্টেমে ভারসাম্যহীনতা, নানা জটিল মহামারি (সাম্প্রতিক করোনার মতো) ইত্যাদি সমস্যা মানবজীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। এর ওপর চতুর্থ শিল্পবিপস্নবের সম্ভাবনাও সমস্যাকে গবেষণা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পারলে আগামী চার-পাঁচ দশকে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা টিকে থাকবে- সেই আশঙ্কা পৃথিবীর অগ্রসর বিজ্ঞানীরা করছেন।

প্রতিটি রাষ্ট্রই নেতৃত্বদানের জন্য অগ্রসর রাষ্ট্র চিন্তার নেতাদের ওপর নিভরশীল ছিল। জনগণের মধ্য থেকেই এই সব দেশপ্রেমিক নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। বাইরের কোনো দেশ ও জাতির ভেতর থেকে এসব স্বাধীন রাষ্ট্রেরর নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। নেতা তৈরি হয় নিজ জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এই পর্বে সব রাষ্ট্রই এক বা একাধিক যোগ্য নেতৃত্ব লাভ করেছিল। তাদের অনুসরণে পরবর্তী সময়ে বেশির ভাগ স্বাধীন রাষ্ট্রে নেতৃত্বের ধারাবাহিক উত্থান ঘটেছে। তবে সব রাষ্ট্রই স্বাধীনতা, বিপস্নব ও যুদ্ধকালে যে ধরনের মেধাবী, যোগ্য ও আত্মউৎসর্গকৃত নেতৃত্ব পেয়েছিল পরর্বতী সময়ে সেই মান ও যোগ্য নেতৃত্বের ধারবাহিকতা সব সময়ে, সব রাষ্ট্র অক্ষুণ্ন থাকেনি। এর একাধিক ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্রপর্বের বিকাশকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট ও অভাব প্রায় সব দেশেই কমবেশি ঘটেছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভে জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বের সাফল্য যতটা মহিমান্বিত হয়েছে, গত প্রায় আড়াইশ বছরের স্বাধীন পর্বে নেতৃত্ব দানে কেউ কেউ স্মরণীয় ভূমিকা রাখলেও অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক গৌরবকে নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। সিমন বলিভার একাধিক লাতিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, অন্য রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনতায় তিনি ছিলেন প্রেরণাদাতা। তারপরও বলিভারের শেষ জীবন কেটেছে কিছুটা অবহেলায়। অথচ বলিভার হচ্ছেন- সেই নেতা, যার নামে বলিভিয়া রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সৌভাগ্য আর কোনো নেতার জীবনে ঘটেনি।

এশিয়া মহাদেশ ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হওয়ার কালে পেয়েছিল এক ঝাঁক জননন্দিত নেতাকে; যাদের মেধা, দেশপ্রেম ও প্রজ্ঞায় এশিয়ার স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের যাত্রা শুরু হয়। একইভাবে গোটা আফ্রিকা মহাদেশে ন’ক্রমা, আহমেদ সিকাও তুরি, জুলিয়াস নায়ারের, আমিলকার কাব্রাল, প্যাট্রিস লুমুম্বারা দেখেছিলেন আফ্রিকার মুক্ত মানুষের স্বাধীন রাষ্ট্র। চীনে মাও সে তুং, ভিয়েতনামে হো চি মিন, ইন্দোনেশিয়ায় সুকর্ন, আমাদের ভারতর্বষ ভূখন্ডে গান্ধী, জিন্নাহ, নেহরু, আজাদ, সুভাষরা নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতার জন্য। আমরা বাঙালিরা সেই নেতৃত্বের পর শেখ মুজিবকে পেয়েছি একজন বঙ্গবন্ধুরূপে- যিনি বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তার সফল রূপায়ন ঘটিয়েছেন ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে। এরপর তিনি আমাদেরকে দিতে চেয়েছিলেন একটি শোষণহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা। বিশ শতকের শুরুতে কামাল আতাতুর্ক বলকান অঞ্চলে তুর্কিদের দিয়েছিলেন একটি আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সেই রাষ্ট্র অনেক দূর এগুলেও নেতৃত্বের সংকটের কারণে তুরস্ক এখন দোলাচলে দুলছে, অগ্রপশ্চাৎ করছে। মধ্যপ্রাচ্য, উওর আফ্রিকায় অনেকগুলো দেশ স্বাধীন হলেও আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার নেতৃত্বের অভাবের কারণে বিশাল এই অঞ্চলের প্রায় সব কয়টি রাষ্ট্রই চলছে চরম অস্থিরতা, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ অবস্থার ভেতর দিয়ে। ইরান চার দশক ধরে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় লড়ছে। এর ভবিষ্যৎ কতটা নিশ্চিত সেটি এখনো বলার সময় হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যে সাদ্দাম, গাদ্দাফি, হাফিজ আল-আসাদ, হাবিব বোর্গুইবাসহ অনেকেই ছিলেন। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রই এখনো স্থির হতে পারেনি। স্বাধীন সব কটি রাষ্ট্রের পথচলা নিষ্কণ্টক হয়নি। যদিও গত শতকের পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তর দশকে স্বাধীন রাষ্ট্র লাভে অনেক যোগ্য নেতাই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো সেই নেতাদের অনেকেই ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন, কেউ কেউ নিহত হলেন, কেউ কেউ অপসারিত হলেন। নেতৃত্বের অভাবে সেই আন্দোলনের, স্বাধীন তৃতীয় বিশ্ব ব্যবস্থা এগুতে পারেনি।

ইউরোপে ইতালির একত্রীকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ম্যাৎসিনি, ক্যাভুর, রাজা ভিক্তর ও গ্যারিবল্ডির নাম। আর জার্মান রাষ্ট্রের সঙ্গে বিসমার্ক অমর হয়ে আছেন। ফরাসি বিপস্নবে অসংখ্য বিপস্নবী জড়িত থাকলেও কু্যদেতা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বিস্ময়কর নেতৃত্ব নিয়ে শুধু ফ্রান্সকেই নয় গোটা ইউরোপকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ শতকের শুরুতে লেনিনের নেতৃত্বে সংগঠিত রুশ বিপস্নব ছিল ইতিহাসের সাড়া জাগানো শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক নতুন ধাঁচের রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঘটনা। তিনি এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যথার্থ মেধাসম্পন্ন, তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক সৃজনশীল নেতা ছিলেন। কিন্তু তার উত্তরসূরি নেতাদের কেউই জটিল এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অমরত্বদানের আর্দশ ও সৃজনশীলতার চর্চায় সাফল্য দেখাতে পারেননি। ফলে সত্তর বছর পেরুতেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কিউবা ব্যতীত অন্যত্র অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রো সোভিয়েত ধাঁচে নয়, বরং নিজস্ব উদ্ভাবনী ক্ষমতায় রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রে এমন বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন- যা জনগণকে রাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্ম হতে সাহায্য করেছে। লাতিন ভূখন্ডে দ্বীপ এই রাষ্ট্রটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নয় বরং একত্রিত হয়ে নিরন্তর লড়াই করে চলছে। পঞ্চাশ বছর শাসনে ফিদেল কিউবার জনগণের কাছে কতটা প্রিয় নেতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন তা ক্ষমতা বর্হিভূত গত এক যুগের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা থেকে জানা যায়, বোঝা যায়।

রাষ্ট্রগুলোর বেশির ভাগই নেতৃত্বের সংকট থেকে বের হওয়ার মতো রাজনৈতিক মতাদর্শের চর্চায় নেই। বস্তুত, এই সময়ে পৃথিবীর সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, স্বীয় সাংস্কৃতিক বিকাশকে কীভাবে সমন্বিতভাবে অগ্রসর করে নিতে হবে; স্থানীয়, আঞ্চলিক, ভৌগোলিক সমস্যাকে অতিক্রম করে বিশ্ব একুশ শতকের জন্য প্রস্তুত এক সভ্যতায় কীভাবে বেড়ে উঠবে সে ধরনের মেধা, প্রজ্ঞা, আদর্শবাদিতায় উদ্বুদ্ধ নেতৃত্বের হাতে বর্তমান যুগের নেতৃত্ব কীভাবে পরিচালিত হবে- সেটি বড়ই জরুরি বিষয়। বিশ শতকের ইতিহাসে সব দেশই অনেক নেতাকে পেয়েছিল যারা এখনো স্মরণীয় হয়ে আছেন। কিন্তু একুশ শতকের দুই দশক চলে গেছে, সম্মুখে বিশ্ব উষ্ণায়ন, চতুর্থ শিল্পবিপস্নব এবং নানা মতাদর্শগত জটিল সংকট, সংঘাতের রাষ্ট্র ব্যবস্থার আগামী দিনগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতা কে কে আবির্ভূত হবেন- আমরা জানি না। তবে সব দেশের সব জাতির ভেতর থেকেই একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ভিশনারি নেতা রাজনৈতিক মতাদর্শ, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান চর্চার নেতৃত্ব অপরিহার্য। সেই বাতাবরণ-ই জন্ম দিতে পারে ইতিহাসের নায়ক, মহানায়কদের।

উন্নত বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, দীর্ঘমেয়াদে নেতৃত্ব দেওয়া শীর্ষ নেতার অবর্তমানে, আরেকজন শীর্ষ নেতা প্রস্তুত করা কঠিন। উদাহরণস্বরূপ, জিম্বাবুয়ের শীর্ষ নেতা রবার্ট মুগাবের গদিচ্যুত হওয়ার পরের ঘটনা অথবা মাহাথির মোহাম্মদ নামক বিখ্যাত নেতা কর্তৃক স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার পর মালয়েশিয়ার ঘটনা অথবা সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার প্রখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক মার্শাল টিটোর মৃতু্যর পরের ঘটনা- যুগোশ্লাভিয়া নামক রাষ্ট্র খন্ডিত হয়ে এখন একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র অথবা প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পরের ঘটনা অথবা ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পরের ঘটনা অথবা আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফিলিপাইনের একনায়ক ফার্দিনান্দ মার্কোস গদিচু্যত হওয়ার পরে ফিলিপাইনের ঘটনা অথবা ইন্দোনেশিয়ার একনায়ক সুহার্তো গদিচু্যত হওয়ার পরের ঘটনা। কয়েক শ’ বছর আগের ইতিহাসে গেলে, বাদশাহ আলমগীরের পরে মোগল সাম্রাজ্যের যে অবস্থা হয়েছিল সেটিও স্মরণযোগ্য। আমরা চাই, বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন বলয়টি যেন নিজেরাই বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করার কারণ হিসেবে আবির্ভূত না হন।

উন্নত রাষ্ট্রসমূহের নেতাদের মধ্যে যেমন রয়েছে বিশ্ব ব্যবস্থার জটিল সমস্যাগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে দেখার, উপলব্ধি করার এবং সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার সংকট, একই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে যুগের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার মতো ভিশনারি নেতৃত্বের ব্যাপক অভাব। এই সময়ে নিজ দেশ এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানে নিজকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অভিজ্ঞতায়সমৃদ্ধ নেতার বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে। সে ধরনের গুণাগুণসম্পন্ন নেতা হয়ে উঠা খুবই কঠিন চ্যালেঞ্জকে ধারণ করার বিষয়। বলা চলে এই সময়ে সে ধরনের অগ্রসর বিশ্বজনীন চিন্তা নিয়ে বেড়ে উঠা রাষ্ট্রনায়কের বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। অধিকাংশ দেশেই রাষ্ট্র রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন সব নেতা ও দল যারা একুশ শতকের রাষ্ট্র নির্মাণের সমস্যাকে উপলব্ধির ধারে কাছেও নিচ্ছেন না, বরং অতীতের উগ্র পশ্চাৎপদ নানা মতাদর্শের দিকেই তাদের আনুগত্য প্রদর্শিত হতে দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো উন্নত দেশ এসব রাজনৈতিক সংকটকে অতিক্রম করার ক্ষেত্রে অবদান রাখার নেতৃত্ব দিচ্ছে না।

পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্রের যোগ্য নেতার ভূমিকা অপরিসীম। যোগ্য নেতার সংকটে বিশ্ব আজ উত্তেজনা ও সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। বিশ্ব আজ নেতৃত্বের প্রবল সংকটে ভুগছে। তাই বিশ্বে আজ এত অস্থিরতা, অশান্তি ও অরাজকতা।

বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ও যুদ্ধের অবস্থা বিদ্যমান। যে কোনো মুহূর্তে বিশ্ব যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পর গত কয়েক বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সংকট দৃশ্যমান ছিল। আজও এ সংকট আছে। তবে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় বর্তমান অবস্থাটা এতটা দুর্বল মনে হয় না। আজ ভিশনারি লিডারের খুবই অভাব। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভিশনারি নেতা খুবই অপরিহার্য ও তাৎপর্যপূর্ণ।