প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্বোধন করেছেন। সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। দেশে কম খরচে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রদানে এ ধরনের হাসপাতাল এটাই প্রথম।
তিন মাসের মধ্যে হাসপাতালটি চালু হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার হার কমবে। সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭৫০ শয্যার হাসপাতালটি ছয়টি বিশেষায়িত বিভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেখানে রয়েছে জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার, হৃদরোগের চিকিৎসায় কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাসকুলার সেন্টার, যকৃতের চিকিৎসায় হেপাটোবিলিয়ারি লিভার অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার, কিডনির চিকিৎসায় কিডনি সেন্টার, মা ও শিশুর চিকিৎসাসেবায় ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার এবং অটিজমবিষয়ক সেবা।
হাসপাতালে রয়েছে ১১টি মডিউলার অপারেশন থিয়েটার। সেখানে উন্নতমানের সার্জারিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া রয়েছে ১০০ শয্যার নিবিড় চিকিৎসা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও ১০০ শয্যার জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা।
এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়া হবে। থাকবে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের (বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন) ব্যবস্থা, রোবটিক অপারেশন ও জিন থেরাপির ব্যবস্থা। থাকবে উন্নতমানের আধুনিক ব্যবস্থাপনার বহির্বিভাগ, ইনফো ডেস্ক ও ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা, গবেষণা কার্যক্রমের গুণগত মানোন্নয়নের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আপনারা এখন যেটুকু করছেন, সে জন্য ধন্যবাদ জানাই। তবে গবেষণার ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে। ’
হাসপাতালটি অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখবে জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধি, যেমন—ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের কারণে প্রায় ৬৭ শতাংশ মৃত্যু ঘটে থাকে। হাসপাতালটি অসংক্রামক রোগের উচ্চতর চিকিৎসা দিতে পারবে। আশা করি, এ হাসপাতালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার হার কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। ’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বত্তৃদ্ধতা করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদল ও বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউন। বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ স্বাগত বত্তৃদ্ধতা করেন।
প্রায় চার একর জমির ওপর মোট এক হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। সরকার বরাদ্দ করেছে ৩৩০ কোটি টাকা এবং বিএসএমএমইউ দিয়েছে ১৭০ কোটি টাকা।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, পাঁচ থেকে আট হাজার রোগী হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা পাবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ সেবা কার্যক্রম শুরু করবে তারা।