খুলনার রূপসায় কৃষি বিপ্লবে যুক্ত হয়েছে উচ্চফলনশীল ‘গ্রীষ্মকালীন টমেটো’। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে এ উপজেলায়। প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভিত্তিতে এই টমেটো চাষের সফলতায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। টমেটো চাষ লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। টমেটোর ফলন এবং দাম দুটিই ভালো হওয়ায় তারা বেজায় খুশি। তাদের এ সাফল্য দেখে অন্য চাষিরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
বারি হাইব্রিড টমেটো খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। ফলে কৃষকরা দামও পাচ্ছেন ভালো। কৃষকরা বলছেন অধিক ফলন আসায় এ টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন তারা। তাই আগামীতে আরো বেশি জমিতে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আধুনিক প্রযুক্তিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন অনেক কৃষক।
তাদের এই সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক গ্রীষ্মকালীন চমেটো চাষ করতে আগ্রহী প্রকাশ করেছেন বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, রূপসা উপজেলার তিলক, ডোবা ও দুর্জ্জনীমহল গ্রামে প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মত গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে বারি হাইব্রিড টমেটো-১১ জাতের এই টমেটো চাষ করেছেন এখানকার কৃষকরা।
কৃষকরা জানান,গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ বেশ লাভজনক। এ টমেটো সংগ্রহের প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। সারা বছর সবজির চাহিদা পূরণ করতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে পরামর্শ দেন কৃষি কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেন।সাদা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ খুবই সহজ। কৃষি অফিস টমেটো চাষিদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে যে কারণে সফলতার মুখ দেখা গেছে।
উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের তিলক গ্রামের কৃষক মলয় কুমার ঘোষ গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।
তিনি জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। জমি প্রস্তুত, সার, ওষুধ ও পরিচর্যার জন্য অফিস হতে সহযোগিতা ও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। ক্ষেতে যে পরিমাণ টমেটো রয়েছে তাতে আরো দেড় লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
তিনি আরো বলেন, সব খরচ বাদে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা আয় হবে এবার। আগামীতে আরো বেশি জমিতে টমেটোর চাষাবাদ করবো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রূপসার মাটি ও আবহাওয়া গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালীন টমেটো অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। কম সময়ে এত বেশি লাভ অন্য কোনো ফসল উৎপাদনে সম্ভব না।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা জানান, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ বেশ লাভজনক। কৃষি অফিস কৃষকদের গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। শীতকালীন টমেটো চাষ করে কৃষক নায্য মূল্য পান। যার ফলে আগামীতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ বৃদ্ধি পাবে।
তিনি জানান, সাদা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ খুবই সহজ। সাধারণত মে মাসের প্রথম দিকে বীজ বপন ও জুন মাসে ওই চারা খেতে রোপণ করতে হয়। জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আসতে শুরু করে। একাধারে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত টমেটো পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড টমেটো খেতে বেশ সুস্বাদু। বাজারেও রয়েছে এই টমেটোর ব্যাপক চাহিদা।
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান জানান, এ বছরই প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভিত্তিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করা হয়েছে। এ টমেটো চাষ খুবই লাভজনক। এ টমেটো বাজারে মূল্যে অনেক বেশি। সারা বছর টমেটোর চাহিদা পূরণ করতে গ্রীষ্মকালীন উদ্ভাবিত বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ ও ১১ জাতের টমেটো চাষ করতে পরামর্শ দেন তিনি। উপজেলা কৃষি অফিস টমেটো চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।