শুক্রবার মানেই ছুটির দিন। সকালে বাজার-সদাই, দুপুরে খাওয়া-দাওয়া আর দু’আড়াই ঘণ্টার সামান্য বিশ্রাম। তারপর! সুদীর্ঘ পদ্মার পাড়ে ঘুরতে যাওয়া। শুধু ছুটির দিন শুক্রবারেই নয়, যে কোনো ছুটির দিনেই বিনোদন প্রেমী মানুষের জনস্রোতে রূপান্তরিত হয় এই পদ্মাপাড়।
ভাদ্রের শেষ, তবুও তীব্র গরম। এই হাঁসফাঁস ধরা তীব্র গরমে প্রাণ জুড়ানো নদীর ঠান্ডা বাতাস ও নয়ন ভোলানো সুবিশাল চরাঞ্চলের দৃশ্য অবলোকনে হাজার হাজার বিনোদন পিয়াসী মানুষ ছুটে এসেছেন প্রমত্ত পদ্মার পাড়ে।
সম্প্রতি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে শহরের ভেতরে অবস্থিত পদ্মাপাড়ে সাজানো হয়েছে আলোকসজ্জা, জননিরাপত্তার খাতিরে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা, জনসাধারণের জন্য পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে ইট-সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চ। এছাড়া জনসাধারণের জন্য সব সময়ের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে মুক্তমঞ্চ, যেখানে সব সময় রয়েছে মানুষের পদচারণা। মনোরম ও নির্মল পরিবেশে পদ্মার বিশাল বালুচরে মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে পদ্মাপাড়। আর তাই, স্রোতহীন পদ্মার বিশাল বালুচরে হাজার হাজার মানুষের পদচারণা দূর থেকে দেখে মনে জনস্রোত।
শান্তির নগরী খ্যাত রাজশাহীবাসীর মনে এক চিলতে প্রশান্তি এনে দেয় এই পদ্মাপাড়। যার কারণে, নগরবাসীর কাছে এটি এখন চিত্তবিনোদনের একমাত্র স্থান। খুব ভোর বেলায় নদী তীরে কিছু লোক হাটতে কিংবা বসে থাকতে দেখা গেলেও বেলা গড়াতে গড়াতে তেমন লোকজন নজরে আসে না। তবে বিকেলে আর রেহাই নেই। বিকেল গড়াতে না গড়াতেই পরিবার-পরিজন নিয়ে দলবেঁধে আসতে থাকে মানুষ। ধীরে ধীরে জমে উঠে পদ্মাপাড়।
বাদাম, ফুচকা, চটপটি, ভুট্টা, চা, শরবত, আইসক্রীম ও হরেক রকমের আচারের দোকান বসতে দেখা যায় এ দর্শনার্থী ঘেরা পদ্মাপাড়ে। শুধু খাবারের দোকানই না, বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, কারুশিল্প ও হরেক রকমের শিশুদের খেলনা নিয়ে চাঞ্চল্যতার দেখা মেলে এ পদ্মাপাড়ে।
১৫ই আগস্ট, জন্মাষ্টমী থেকে শুরু করে সাপ্তাহিক শুক্রবারের ছুটি। সবমিলিয়ে লম্বা ছুটি পেয়েছেন অনেকেই। আর তাই পদ্মাপাড়ে ভিড়ও হয়েছে দেখার মতো।
শুক্রবার বিকেলের শুরুতেই পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে জনস্রোত। এই জনস্রোত আরো বাড়বে সন্ধ্যা নাগাদ। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কিংবা রাজশাহীর বাহির থেকে বিভিন্ন কাজে আসা যে কোনো আগুন্তকের প্রিয় স্থান এই পদ্মার পাড়।
নগরীর উপকণ্ঠ কাশিয়াডাঙ্গার নবগঙ্গা, হাইটেক পার্কের পাশে অবস্থিত ছোট আই বাঁধ, পুলিশ লাইনসের পাশে অবস্থিত টি-বাঁধ, সিমলা পার্ক, সীমান্তে নোঙ্গর, লালনশাহ মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেন, ফুদকিপাড়ার রবীন্দ্রনাথ মঞ্চ, আলুপট্টি ঘাট, তালাইমারি শহীদ মিনার চত্ত্বর ও ফুলতলার জাহাজঘাট সহ প্রায় ৩০ কিলোমিটার সুদীর্ঘ পদ্মাপাড় রয়েছে রাজশাহীবাসীর বিনোদনের জন্য।
নগরীর বেলদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুদ রানা। পেশায় রাজশাহী রেশম কারখানার দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী। ছুটির দিনে পরিবারসহ বিনোদনের আশায় এসেছেন লালন শাহ মুক্তমঞ্চে।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ছাড়া অন্য কোন দিনে পরিবার নিয়ে বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া শুক্রবারের দিনেই মানুষ বেশ ঘুরতে পচ্ছন্দ করে। বিশেষ করে পদ্মাপাড়ে। ছুটির দিনে পদ্মাপাড় অনেক লোকজন থাকায় অনেকটা ঈদ ঈদ লাগে। তাই পরিবার নিয়ে পদ্মাপাড়ে একটু বিনোদনের আশাতেই ঘুরতে আসা আর কি!’
সারাক্ষণ মোবাইলে ব্যস্ত সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী শিশু রাফসান। রাফসানের বাবা রাশেদ চাকরি করেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে। তাই ব্যস্ততা প্রতিদিন। তবে শুক্রবার খানিকটা সময় পান। শুক্রবার পেয়েছেন সময়। তাই মোবাইলে ব্যস্ত থাকা রাফসানকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন পদ্মাপাড়ে।
রাশেদ বলেন, ‘কর্মব্যস্ততার কারণে সময় হয়ে উঠে না। তাই পরিবার নিয়ে বাইরেও যাওয়া হয় না তেমন। শুক্রবার খানিকটা সময় মেলে। তাই প্রতি শুক্রবার বিকেলে নদীর ধারে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি পদ্মাপাড়ে। যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্য প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে বেশ ভালোই লাগে।’
মুক্তমঞ্চের পাশে ফুচকা বিক্রি করেন রিমন রহমান নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো লোকজন থাকে না। ওই সময় কোনো ব্যবসাও হয় না। বিকেলে মোটামুটি লোকজন বেশি আসে পদ্মাপাড়ে। তবে শুক্রবার ও বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে পদ্মার পাড়ে মানুষের প্রচুর ভিড় হয়। এতে আমাদেরও কিছুটা আয়-রোজগার হয়।’
শুক্রবার ছুটির দিনে জনস্রোত ও জননিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশের রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্র উপপুলিশ কমিশনার ও নগর মুখপাত্র মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘নগরবাসীর নিরাপত্তার খাতিরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। তাছাড়া টুরিস্ট পুলিশ ডিউটিরত থাকেন। তারপরও যেসব এলাকা পুলিশি নিরাপত্তা রেঞ্জের বাইরে সেগুলোর জন্য বিনোদনে আসা মানুষকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।’