গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারাদেশে বিনামূল্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ, রাসায়নিক সারসহ আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। প্রণোদনার এই সার, বীজ ও অর্থ সহায়তায় রাজশাহীতে ৩২ কোটি টাকারও বেশি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বিক্রির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
ডেইলি বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাজদার হোসেন। তিনি বলেন, সারাদেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি, আমদানি হ্রাস ও পেঁয়াজের ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপপরিচালক তৌফিকুর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এরই মধ্যে রাজশাহী জেলার জন্য দুই হাজার কেজি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজ পেয়েছি। এটি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। এই পেঁয়াজ বীজ শুধু গ্রীষ্মকালই নয়, বরং সব সময়ই এর চাষাবাদ ভালো হয়। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে এর ফলন অত্যন্ত ভালো হয়। এরই প্রায় এক হাজার ৩০০ কেজি বীজ কৃষকদের প্রদান করা হয়েছে। সেই বীজ থেকে কৃষকরা চারা উৎপাদন করেছেন এখন।
তিনি আরো বলেন, আশা করছি আর ১০ থেকে ১৫ দিন পরই এসব বীজ চারায় পরিণত হবে এবং তা মাঠে রোপণ করা যাবে। এরপর দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে এবং ভোক্তাদের মাঝে তা পৌঁছে যাবে। এই পেঁয়াজ বীজ থেকে বিঘা প্রতি প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। সাধারণত অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের দিকে পেঁয়াজের বেশি ঘাটতি হয়। এই সময়ের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন হলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি আর থাকবে না। পাশাপাশি এই পেঁয়াজের আবাদের সফলতা পেলে তা পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
তৌফিকুর রহমান বলেন, এ জাতের পাঁচ থেকে ছয়টা পেঁয়াজেই এক কেজি ওজন হয়। এছাড়া এই পেঁয়াজের উৎপাদন সক্ষমতা শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি। তাই এই পেঁয়াজ চাষে সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে প্রান্তিক কৃষকও লাভবান হবেন। সারাদেশে এই পেঁয়াজের চাষাবাদ হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে পেঁয়াজের বিদ্যমান ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে।
গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের ধামিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম। এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি সার, প্রণোদনার অর্থসহ বিভিন্ন উপাদান পেয়ছেন। এতে আনন্দিত কৃষক মনিরুল।
তিনি ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, গতবার শেষ দিকে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। ফলন ভালো পায়নি, কারণ শীত পড়ে গিয়েছিল। এবার আগেভাগেই দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আশা করছি দুই বিঘায় প্রায় ৫০০ মণ পেঁয়াজ পাবো।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মাজদার হোসেন বলেন, চলতি খরিপ মৌসুমে (২০২২-২৩) গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের প্রান্তিক চাষিদের মাঝে ‘কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা’ খাত থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে রাজশাহীর ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য দুই হাজার কেজি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজ এবং এক কোটি ৭৫ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় মোট দুই হাজার সুবিধাভোগী প্রান্তিক কৃষক পাবেন এ সরকারি প্রণোদনা।
তিনি জানান, প্রণোদনার নীতিমালা মোতাবেক একজন কৃষক এক বিঘা জমির জন্য পাবেন এক কেজি পেঁয়াজ বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার এবং ২০ কেজি এমওপি সার। এছাড়া চারা উৎপাদন খরচ বাবদ বিঘা প্রতি দুই হাজার ৮০০ টাকা করে পাবেন। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে- পবায় ২৭০ কেজি, তানোরে ৭০ কেজি, মোহনপুরে ২০০ কেজি, বাগমারায় ২০০ কেজি, দুর্গাপুরে ৩০০ কেজি, পুঠিয়ায় ৩২০ কেজি, গোদাগাড়ীতে ২২০ কেজি, চারঘাটে ২০০ কেজি এবং বাঘায় ২২০ কেজি করে মোট দুই হাজার কেজি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হবে।
উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, গত বছরের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উপজেলাভিত্তিক আবাদ, উৎপাদন এবং অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি জ্ঞান কাজে লাগানোর বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে এ প্রণোদনা প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এ নিয়ে চলতি বছরের মে মাসে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে একটি আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ৯টি উপজেলার মধ্যে প্রণোদনার অর্থ, সার ও বীজ বণ্টনের একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনাটি গৃহীত হওয়ায় সে মোতাবেক কাজ চলছে।
তিনি বলেন, দুই হাজার কেজি এই প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজ থেকে চলতি খরিপ মৌসুমে চার হাজার বিঘা পেঁয়াজ চাষ করা যাবে। এতে প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। ঐ সময় সর্বনিম্ন পেঁয়াজের বাজার মূল্য ২০ টাকা কেজি প্রতি ধরা হলেও প্রায় ৩২ কোটি টাকার পেঁয়াজ বিক্রি সম্ভব হবে। তবে কৃষকরা বলছেন তারা বিঘা প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ মণ পেঁয়াজ পাবেন। সেক্ষেত্রে উৎপাদন সম্ভাবনা ১৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।