মিশ্র ফলে লাভবান ওবায়দুল

মাগুরা সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের ওবায়দুর ইসলাম নামে এক কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মিশ্র ফল বাগান করে লাভবান হয়েছেন। তার এ বাগানে বিশেষ করে বাংলার অপ্রচলিত ফল শরিফা ফলের সঙ্গে চাষ হয়েছে আরো নানা জাতের ফল।
মো. ওবায়দুল ইসলামের এ বাগান ঘিরে এরই মধ্যে এলাকার কৃষকদের মধ্যে এ ফল চাষের আগ্রহ বেড়েছে। তার নিজের ৩ একর এবং দীর্ঘ মেয়াদি ৭ একর জমিসহ মোট ১০ একর জমি লিজ নিয়ে শরিফা ফলের সঙ্গে পেয়ারা, পেঁপে, মাল্টা, থাই কুলসহ অন্যান্য ফল গাছ লাগিয়েছেন। ২০২০ সালে এ মিশ্র ফল বাগান তৈরি করেছেন তিনি। যা থেকে এরই মধ্যে পেয়ারা বিক্রি করেছেন ৮ লক্ষাধিক টাকা। মাল্টা বিক্রির মাধ্যমেও ঘরে তুলেছেন অর্থ। এ ছাড়া সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছেন লালশাক, পালং শাক, মরিচসহ অন্যান্য ফসল। যা বিক্রি করেও বাড়তি অর্থের জোগান পাচ্ছেন তিনি।

ফল চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় ওবায়দুরকে অনুসরণ করে এলাকার অনেক কৃষক এবং বেকার যুবক এ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তারা এ চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করতে ফল চাষে এগিয়ে আসছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ওবায়দুল ইসলানের মিশ্র ফল বাগান তৈরিতে শুরু থেকেই নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।

সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাসের ছেলে ওবায়দুল ইসলাম নিজ গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী আলীধানী গ্রামে মিশ্র ফল বাগান তৈরির জন্য সার্বিকভাবে ব্যয় করেছেন ২২ লাখ টাকা। এরই মধ্যে কেবল পেয়ারা বিক্রি থেকে তিনি ৮ লক্ষাধিক টাকা ঘরে তুলেছেন। ২ বছর ১ মাস বয়সী শরিফা ও মাল্টা গাছের ফলও বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার প্রচুর টাকার থাই কুল বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করছেন। ওবায়দুল ইসলাম তার এ মিশ্র ফল বাগান নিয়ে আশাবাদী। স্থানীয় কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় তিনি খুশী।

সরেজমিনে ওবায়দুল ইসলামের বাগানে কথা হয় তার সঙ্গে। কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে ধান, পাট বা অন্য ফসল আবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এতদিন। বড়ভাই রেজাউল হকের উৎসাহে তিনি ফল চাষে আগ্রহী হন। তার বাগানের শুরু থেকেই স্থানীয় কৃষি অফিস, উপ সহকারী কৃষি কর্তারা সময় উপযোগী পরামর্শ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে তাকে উৎসাহ দিয়ে আসছেন।

ওবায়দুর ইসলাম বলেন, ২০২০ সালে মিশ্র ফল চাষ শুরু করেছেন। শরিফা ফলটি দেশ থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আমার জানা মতে মাগুরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমি প্রথম শরিফা (মেওয়া) করেছি। এটি খেতে সুস্বাদু। বাজারে দামও ভালো। যা স্থানীয়ভাবেও পুষ্টির চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব হবে। মোট ১০ একর জমির মধ্যে ২ একর ৩৫ শতাংশে রয়েছে ১ হাজার ৩৫০টি পেয়ারা, ৪০০টি শরিফা, ২ একর ৩০ শতাংশে মাল্টা ও এর সঙ্গে রয়েছে ৪ একর ৭৫ শতাংশে উচ্চ ফলনশীল থাই কুল, পেঁপে, মরিচসহ বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি।

তিনি আরো বলেন, ১০ একর জমিতে মিশ্র ফল বাগান গড়ে তুলতে তার এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২২ লাখ টাকা। এ বাগানে গড়ে প্রতিদিন ৬ জন কৃষি শ্রমিক ৬০০ টাকা করে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করে থাকেন। বাগানের প্রতিটি গাছে পরিপূর্ণভাবে ফল আসলে স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করার ইচ্ছা রয়েছে। এছাড়া নতুন করে ২৫ শতাংশ জমিতে ড্রাগন চাষের জন্য কার্যক্রম চলছে। আমি মনে করি যেহেতু ফল চাষ অধিক লাভজনক। সে কারণে চাকরির পেছনে না দৌড়ে বাগানভিত্তিক ফল চাষের মাধ্যমে অনেকটাই বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ওবায়দুল ইসলাম একজন প্রগতিশীল কৃষক। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ মিশ্র ফল বাগানটি গড়ে তুলেছেন। বিশেষ করে অপ্রচলিত শরিফা ফলটি আমার জানামতে তিনিই মাগুরাতে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন। একই বাগানে মিশ্র ফল হিসেবে চাষ করেছেন পেয়ারা, থাইকুল, পেঁপে, মাল্টাসহ অন্যান্য ফলের। তাকে অনুসরণ করে অন্য চাষিরাও এ চাষে এগিয়ে আসলে কৃষি বিভাগ তাদের প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেবে।