ভিক্ষা নয়, পেলেন রঙিন রিকশা

রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে ছয়জনের খাবার জোগাতেন আবুল কাশেম। রিকশা চালাতে গিয়ে দুই পায়ে দেখা দেয় ক্ষত। ধীরে ধীরে এ ক্ষত বাড়তে থাকায় কেটে ফেলতে হয় দুই পা। তবু ঘরে বসে থাকতে পারেননি তিনি। নিজের চিকিৎসা আর চার ছেলে-মেয়ের মুখে আহার জোগাতে দুই হাত বাড়িয়ে দেন মানুষের মাঝে। ভিক্ষা করে এভাবেই চলছিল ১৫ বছর।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও ভিক্ষার ঝুলি গলায় ঝুলিয়ে মানুষের কাছে হাত পাতেন আবুল কাশেম। এর মধ্যে সরকারি একজন কর্মকর্তার কাছেও ভিক্ষা চান তিনি। কিন্তু তাকে ভিক্ষা দেননি সরকারি সেই কর্মকর্তা। ভিক্ষা না পেলেও নতুন করে কপাল খুলল দুই পা হারানো আবুল কাশেমের। সরকারিভাবেই পেয়েছেন এক রঙিন রিকশা।

আবুল কাশেমের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের গুজিখাঁ গ্রামে। তার বাবার নাম জসিম উদ্দিন। দুই পা হারানোর পর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে নিজের বাড়ির ভিটাও বিক্রি করতে হয় আবুল কাশেমের। ঠাঁই নিতে হয় শ্বশুরালয় ডৌহাখলা ইউনিয়নের রামসিংজানী গ্রামে।

জানা গেছে, দুই পা হারিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন আবুল কাশেম। তার সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। সম্প্রতি গৌরীপুর পৌর শহরের মধ্যবাজারে তিনি ভিক্ষা করতে আসেন। এ সড়কে আসার পথে ইউএনও হাসান মারুফের কাছে ভিক্ষা চান তিনি। তবে আবুল কাশেমের জীবনের আদ্যোপান্ত জানতে উপজেলা সমাজসেবা বিভাগকে দায়িত্ব দেন ইউএনও। পরে সরেজমিন গিয়ে তার মর্মস্পর্শী ঘটনার সত্যতা পান উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম আকন্দ।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে সোমবার আবুল কাসেমের হাতে রঙিন রিকশা তুলে দেওয়া হয়। ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা দফতর এ রিকশা দেয়। এছাড়া একই দিনে আরো দুজনকে দুটি অটোরিকশা ও দুজনকে দুটি গাভি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে তাদের হাতে এসব উপকরণ তুলে দেন স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ।