আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম দশগুণ বেড়েছে ও তেলের দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে, ফলে উন্নত রাষ্ট্রগুলোও বিদ্যুৎ উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে। জ্বালানি সংকটের কারণে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জনগণকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কায় জাপান এবং ফ্রান্সেও জনগণের প্রতি একই আহ্বান জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে কখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়নি। সেখানেও এর সাশ্রয়ের জন্য বলা হয়েছে এবং অনেক শহরে পানি গরম করার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ও সিডনিতে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। আর ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে ভারত।
বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কমেনি, কমেছে জ্বালানী সরবরাহঃ
দেশে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন বিদ্যুৎ পেতো মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ আর এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। চলমানে সংকটে এটি ভাবার অবকাশ নেই যে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কমে গিয়েছে। বস্তুত দেশে বিদ্যুতের সংকট হয়নি, উৎপাদনের সক্ষমতাও কমে যায়নি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সাশ্রয়ী হতে রুটিন মেপে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অথচ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে হারিকেন উৎসবে মেতে উঠেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীরা। বিদ্যুতের সমস্যা শুধু বাংলাদেশে একা নয়, এটা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। আবার বিএনপির কোনো কোনো সিনিয়র নেতা দেশের লোডশেডিংয়ের ঘটনাকে শ্রীলংকার সঙ্গে তুলনা করছেন। বাংলাদেশ শ্রীলংকা হওয়ার পথে বলেও আজগুবি ও ভুতুড়ে মন্তব্য করছেন।তবে বাস্তবে বাংলাদেশ আর শ্রীলংকার লোডশেডিংয়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। শ্রীলংকার বিদ্যুৎখাত সম্পূর্ণ ডিজেল নির্ভর। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাত শুধু ডিজেল নির্ভর নয়। আমাদের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র, গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ডিজেল বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মিত হচ্ছে। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ছাড়াও অনেকগুলো বিকল্প উৎপাদন রয়েছে।
ভয়াবহ সংকট যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকার আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেঃ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে জ্বালানি তেলের দাম ৭০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার জনগণের কথা চিন্তা করে জ্বালানি তেলের মূল্য গত বছর বাড়ায়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। অব্যাহতভাবে এমন ভর্তুকি দেওয়া কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। গত তিন মাসে বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।রাশিয়ার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে জ্বালানি, খাদ্য-সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বে সকল দেশে সংকট কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধীদল সমালোচনা করছে সরকারের।