৩২ বছরের ভালোবাসার ফল পেল কালোপাহাড়-জলনূপুর

রংপুর চিড়িয়াখানায় জলহস্তী লিয়নের সঙ্গী হিসেবে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে জলহস্তী জলনূপুর (স্ত্রী) আর কালাপাহাড়কে (পুরুষ) এখানে আনা হয়। তবে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মারা যায় বয়স্ক লিয়ন।
এরপর থেকে জলবন্দি খাঁচায় কালাপাহাড় আর জলনূপুরের সুবন্ধন গড়ে ওঠে। দীর্ঘ ৩২ বছর পর তাদের ভালোবাসায় রংপুর চিড়িয়াখায় বাচ্চা জন্মের সুখবর দিলো জলনূপুর। ফলে প্রথমবারের মতো রংপুরবাসীও দেখতে পেল জলহস্তীর শাবক।

প্রথমবারের মতো মা হয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছে জলনূপুর। শাবকটির সঙ্গে কাদা-পানিতে হাবুডুবু খেলায় কাটছে তার সময়। এমন দৃশ্য উপভোগ করতে পেরে আনন্দিত দর্শনার্থীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ শাবকটির জন্ম হয়। জলনুপুর ৮ মাস গর্ভধারণের পর প্রসব করে। জলহস্তী শাবকটি বর্তমানে সুস্থ আছে। তবে এটি স্ত্রী নাকি পুরুষ তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, রংপুর চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি পুরুষ জলহস্তী ছিল। যার নাম ছিল লিয়ন। ২১ বছরের বেশি সময় পর লিয়নের সঙ্গী হিসেবে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে জলহস্তী জলনূপুর (স্ত্রী) আর কালাপাহাড়কে (পুরুষ) এখানে আনা হয়। বয়স্ক লিয়ন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মারা যায়। এরপর থেকে জলবন্দি খাঁচায় কালাপাহাড় আর জলনূপুরের সুবন্ধন গড়ে ওঠে। দীর্ঘ ৩২ বছর পর তাদের ভালোবাসায় রংপুর চিড়িয়াখায় বাচ্চা জন্মের সুখবর দিলো জলনূপুর। ফলে রংপুরবাসীও প্রথমবারের মতো দেখতে পেল জলহস্তীর শাবক।

রংপুর চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা চায়না বলেন, আমার বাড়ির পাশেই চিড়িয়াখানা। দুপুরে শুনলাম একটি জলহস্তী বাচ্চা দিয়েছে। তাই দেরি না করে বাচ্চাটি দেখতে এসেছি। সঙ্গে আমার ছোট ছেলে এবং ভাগনে এসেছে। সবাই খুব খুশি। দেখে খুবই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে বাড়িতে কাজ ফেলে রেখে আসাটা স্বার্থক হয়েছে।

আরেক দর্শনার্থী বলেন, আগে খাঁচায় তিনটি জলহস্তী ছিল। দুটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী জলহস্তী। গত বছর একটি পুরুষ জলহস্তী মারা গেছে। এরপর থেকে দুটি দেখে আসছি। আজ হঠাৎ খাঁচার সামনে গিয়ে তিনটি জলহস্তী দেখে প্রথমে অবাক হয়েছি। পরে জানতে পারলাম নতুন শাবকের আগমন হয়েছে। চিড়িয়াখানায় এই প্রথম জলহস্তীর বাচ্চা দেখতে পেলাম। এটি আমাদের জন্য আনন্দের খবর।

রংপুর চিড়িয়াখানার অফিসার এইচএম শাহাদাত জানান, আমরা যখন বুঝতে পারলাম জলহস্তী জলনূপুরের পেটে বাচ্চা এসেছে তখন থেকে বিশেষ পরিচর্জা শুরু করা হয়। দীর্ঘ ৮ মাসের প্রতীক্ষার পর আজ সকাল সোয়া ৯টার দিকে বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চাটির ওজন ২৫-৩০ কেজি হবে। এখন বাচ্চা সুস্থ ও সবল আছে।

চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. আমবার আলী তালুকদার জানান, জলহস্তী জলনূপুর গর্ভধারণের পর থেকেই আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলাম। পুরুষ জলহস্তী কালাপাহাড়কে আলাদা করে রাখা হয়। কারণ বাচ্চা মেরে ফেলার প্রবণতা আছে পুরুষ জলহস্তীর। তাছাড়া মা জলনূপুর সার্বক্ষণিক নজরদারি করে তার শাবকটিকে আগলে রাখছে।

তিনি আরো জানান, একেকটা জলহস্তী জাতভেদে ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। সংরক্ষিত জায়গায় আরও বেশি দিন বাঁচার নজির আছে। এগুলো একসঙ্গে একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। জলহস্তী তৃণভোজী। একবার ডুব দিয়ে পানির নিচে এগুলো পাঁচ মিনিটের বেশি থাকতে পারে। এগুলোর বসতি মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন বনাঞ্চলে।

২০১৪ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানায় কালাপাহাড়ের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে সেখানেই ছিল। ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট কালাপাহাড়কে রংপুরে আনা হয়। এর সঙ্গী জলনূপুরকে পরের বছর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে। বর্তমানে শাবকটিসহ চিড়িয়াখানাতে তিনটি জলহস্তী রয়েছে।