দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুরু হয়েছে ঢাকা-টরন্টো রুটের বাণিজ্যিক ফ্লাইট। বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ও মর্যাদাকর এই রুটের ফ্লাইট চালু করার গৌবর অর্জনকারী রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহুল প্রতীক্ষিত এই ফ্লাইট (বিজি-৩০৫) মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটায় ঢাকা ছেড়ে গেছে। এতে যাত্রী ছিলেন ১৬০ জন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ও সিইও যাহিদ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ফ্লাইটের ১৬০টি আসনের টিকেট বিক্রি হয়েছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেবার মান ভাল হলে তখন প্রতিটি ফ্লাইট যাত্রী পরিপূর্ণ হবে। অন্যদিকে, টরন্টো ফ্লাইট পরিচালনায় বিমান সফল হবে বলে মনে করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
এ রুটে এটিই প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট। আপাতত ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টো যাচ্ছে না ফ্লাইটটি। তুরস্কের ইস্তানবুলে থাকছে প্রায় এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি। সেখানে উড়োজাহাজে তেল নেবে। তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিমান চাইলে তুরস্ক থেকে যাত্রীও নিতে পারবে।
তবে, টরন্টো থেকে ফেরার পথে ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করবে সরাসরি। ঢাকা-নিউইয়র্ক ও ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বেশ আগে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনায় সেই নির্দেশনা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিমান।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ সমীক্ষা ও প্রস্তুতি ছাড়াই এ রুটে টেস্ট ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। তখন এই ফ্লাইটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলমসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কানাডার টরন্টো ভ্রমণ করেন। এতে সরকারের খরচ হয় প্রায় চার কোটি টাকা। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে গত জুন থেকে ঢাকা-টরন্টো রুটে ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা দেন বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।
কিন্তু পূর্ণ প্রস্তুতি না থাকায় তারিখ পিছিয়ে ২৭ জুলাই নির্ধারণ করা হয়। তবে, এই ফ্লাইট নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশের শীর্ষ এভিয়েশন সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে বিমানের সাবেক এমডি ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের ব্যক্তিগত পছন্দের মাত্র চার সাংবাদিককে উদ্বোধনী ফ্লাইটের অতিথি করায়। এ নিয়ে গোটা এভিয়েশন সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়ে বারবার প্রশ্নবানে জর্জরিত হন প্রতিমন্ত্রীসহ বিমানের শীর্ষকর্তারা। শেষ পর্যন্ত এ ধরনের বিতর্কের দায় নিয়ে বিমান থেকে বিদায় নিতে হয় সাবেক এমডিকে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ৩টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-টরন্টো রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হয়। এ জন্য আগেভাগেই প্রস্তুত করা হয় বিমানের বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার। এখন থেকে সপ্তাহে দুদিন তথা রবি ও বুধবার ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। ওই ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা দিয়ে তুরস্কের স্থানীয় সময় আজ বুধবার সকাল ৯টায় ইস্তানবুলে এক ঘণ্টা বিরতি করবে।
পরে ওইদিন কানাডার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় টরন্টোতে অবতরণ করবে। সেখানে কয়েক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবে বিমান। টানা ১৬ ঘণ্টা ফ্লাই করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকায় অবতরণ করবে। এই ফ্লাইটে ২৯৮ জন যাত্রী একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবেন।
জানা গেছে, ফিরতি ফ্লাইটে টিকেট কেটেছেন ১৭৫ জন। ফ্লাইট পরিচালনার আগ দিন পর্যন্ত টিকেট বিক্রি চলবে। ততক্ষণে আরও বেশ কিছু টিকেট বিক্রি হতে পারে। এ রুটে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিচ্ছে বিমান। এই হিসাবে ইকোনমিক ক্লাসে একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া ৯৫ হাজার টাকা, আর ফিরতি টিকেট কিনলে এক লাখ ৫৩ হাজার ৫৭০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইভাবে বিজনেস ক্লাসে একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া এক লাখ ৬৪ হাজার ১০০ টাকা, আর রিটার্ন টিকেট কাটলে তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
আসন ফাঁকা রেখে এই বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা কতটা সফল হবে- তা জানতে চাইলে বিমানের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, ঢাকা থেকে অনেক উড়োজাহাজ টরন্টোতে ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে বিমানের এটি প্রথম যাত্রা। ৮-১০টি ফ্লাইট পরিচালনার পর যাত্রীরা যখন দেখবেন, বিমানের সেবার মান ভাল তখন এমনিতেই যাত্রী পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর, ঈদের ছুটি, বড়দিন, গ্রীষ্মের ছুটিতে এই রুটে যাত্রীর চাহিদা বেশি থাকে।
এই সময়গুলো কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে বিমান। আশা করা যায়, টরন্টো ফ্লাইট পরিচালনায় বিমান সফল হবে। এ রুটে বাণিজ্যিক একটি ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের কী পরিমাণ টাকা ব্যয় হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তাহেরা খন্দকার বলেন, ফ্লাইট পরিচালনায় আয়-ব্যয় বা নিরীক্ষা করতে বিমানের মার্কেটিং রিসার্স সেল রয়েছে। তারা সবকিছু হিসাব করেছেন। কয়েকটি ফ্লাইট চললে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানো যাবে।
বিমানের জনসংযোগ শাখা জানিয়েছে, আপাতত ঢাকা-টরন্টো রুটে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার বিজি৩০৫ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টরন্টোর উদ্দেশে যাত্রা করবে। যাত্রাপথে ফ্লাইটটি রিফুয়েলিংয়ের জন্য স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় তুরস্কের ইস্তানবুলে অবতরণ করবে।
এক ঘণ্টা বিরতি শেষে ইস্তানবুল থেকে রওনা দিয়ে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইটটি টরন্টো পৌঁছাবে। সপ্তাহের প্রতি রবিবার বিজি৩০৫ ঢাকা থেকে ভোর সাড়ে ৩টায় যাত্রা করে রিফুয়েলিংয়ের জন্য স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় তুরস্কের ইস্তানবুলে অবতরণ করবে। এক ঘণ্টা বিরতি শেষে ইস্তানবুল থেকে রওনা দিয়ে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে ফ্লাইটটি টরন্টো পৌঁছাবে। অন্যদিকে, প্রতি বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিজি৩০৬ টরন্টো থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
যাত্রাবিরতি ছাড়াই ফ্লাইটটি একটানা ১৬ ঘণ্টা উড়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সপ্তাহের প্রতি রবিবার টরন্টো থেকে স্থানীয় সময় রাত ৯টায় উড্ডয়ন করে সরাসরি ঢাকায় পৌঁছাবে সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১টায়। বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান।