শিশুমৃত্যু কমাতে ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প

দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু কমাতে এবং শিশুদের সার্বিক বিকাশে যাত্রা শুরু করেছে নতুন প্রকল্প। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রায় ২৭২ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ শীর্ষক এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা, বিশেষত স্বাস্থ্য-পুষ্টি, সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও শিক্ষা শিশুদের বেঁচে থাকা এবং পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পটির লক্ষ্য যত্ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ, শিক্ষা, সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনা। সমাজভিত্তিক সমন্বিত প্রাক-শৈশব বিকাশ (ইসিসিডি) সেবা প্রদানসহ শিশু সুরক্ষায় এ প্রকল্প গত ২২ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদিত হয়। জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যার ৮০ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার, ২০ শতাংশ বহন করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিজ এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়াল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন। শিশু একাডেমির তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি দেশের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্পের আওতায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী দুই লাখ শিশুর জন্য প্রকল্প এলাকায় আট হাজার সমাজভিত্তিক শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন ১৬ হাজার গ্রামীণ নারী। এক হাজার ৬০০ স্থানে ছয় থেকে ১০ বছর বয়সী তিন লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানো হবে।

প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘শিশু সুরক্ষায় এই প্রকল্প ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। আমরা আশা করি, প্রকল্পটির সাফল্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে পথ দেখাবে। শুধু সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এককভাবে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারবে না। প্রকল্পের সাফল্যের জন্য এই মন্ত্রণালয় ছাড়াও সরকারের স্বাস্থ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার ও সমাজকল্যাণসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হবে। ’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘প্রকল্পটি সামগ্রিকভাবে শিশু বিকাশের ধারণায় আমূল পরিবর্তন বয়ে আনবে। প্রকল্পটি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য একটি বিনিয়োগ, যা শিশুদের জীবনের শক্ত ভিত রচনায় অবদান রাখার পাশাপাশি তাদের পরিবারকে শিশুর যথাযথ লালন-পালনে অভ্যস্ত করে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম বলেন, ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ প্রদানসহ শিশুর বিকাশ ও সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে শিশু সুরক্ষা ও বিকাশে গ্রামীণ পর্যায়ে কাজ করার শুভ সূচনা হলো। ’

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিজের পরিচালক কেলি লারসন বলেন, ‘ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিজ ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশুদের সুরক্ষায়, বিশেষত অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাতজনিত মৃত্যু প্রতিরোধে একটি কার্যকর মডেল উদ্ভাবনে কাজ করে আসছে। শিশু যত্ন কেন্দ্রগুলোর সমন্বিত কার্যক্রমে শিশুর সামগ্রিক বিকাশ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ অর্জনে অবদান রাখবে। বাংলাদেশ সরকারের এ কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। ’

যুক্তরাজ্যের রয়াল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশনের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল প্রগ্রামস স্টিভ উইলস অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘শুধু দেশেই নয়, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। ’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনারগোসের প্রগ্রাম পরিচালক চং-লিম লি, বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের সহসভাপতি মাহমুদা আকতার এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের উপনির্বাহী পরিচালক আমিনুর রহমান।