পুঁজিবাজার চাঙায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে অর্থমন্ত্রীর একগুচ্ছ নির্দেশনা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ আর্থিক খাতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের খারাপ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যে করেই হোক বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। একটি সুন্দর স্থিতিশীল বাজারে পরিণত করতে হবে।

পুঁজিবাজার টেনে তুলতে এবার রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির মাধ্যমে ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে এই প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আইসিবিকে দেয়া দেড় শ কোটি টাকার যে তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেটির মেয়াদ বাড়িয়ে তহবিলের আকার দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তও হয়েছে। সোমবারই এই তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা হবে।

টানা দরপতনের মধ্যে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআরর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে বৈঠকে এসব নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৈঠকে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন মন্ত্রী। তিনি পরিষ্কার করে বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের খারাপ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যে করেই হোক বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। একটি সুন্দর স্থিতিশীল বাজারে পরিণত করতে হবে।

আর এ জন্য বৈঠকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

পুঁজিবাজার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে বেশ কিছু মতপার্থক্যের ইস্যু ধরেই গত সেপ্টেম্বর থেকে সংশোধন শুরু হয়। পরে যোগ হয় ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি ও খাদ্যমূল্যের দর বৃদ্ধি, মুদ্রার দরপতন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ধসসহ নানা বৈশ্বিক ইস্যু।

এই পরিস্থিতিতে বৈঠকে পুঁজিবাজারে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে বাজারে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে ব্যাংকগুলো আইসিবির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ করবে, সেটাকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমার (এক্সপোজার লিমিট) বাইরে রাখা হবে।

গত কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। একটি ব্যাংক কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারে, তাকে বলে এক্সপোজার লিমিট।

বর্তমানে কোনো শেয়ারের ক্রয়মূল্য অথবা বাজারদর যেটি বেশি, সেটি এক্সপোজার লিমিট হিসেবে গণ্য হয়। তবে বিএসইসি চাইছে এটি শেয়ারের ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ হোক।

আবার কোনো ব্যাংক নিজে যে বিনিয়োগ করে, সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য যে টাকা দেয়, আইসিবিকে যে ঋণ দেয়, সবই এক্সপোজার লিমিটের ভেতরে পড়ে।

এ ছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আইসিবিকে দেয়া ১৫৩ কোটি টাকার যে তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেটির মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তহবিলের আকারও বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, মহামারি করোনার মধ্যেও আমাদের অর্থনীতি ভালো ছিল। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ অনেক দাতা সংস্থা আমাদের প্রশংসা করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও আমরা ভালো আছি। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার খারাপ যাবে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না ‘

ওই কর্মকর্তা বলেন, যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্ত্রী বিশ্বাস করেন।

এসব পদক্ষেপের ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেকও।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আতঙ্কের মধ্যে আছেন ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। এ সিদ্ধান্তের ফলে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।’

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার আরও ১১৫ পয়েন্ট পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক এখন গত বছরের ২৯ জুনের পর সর্বনিম্ন। সেদিন ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৪২ পয়েন্ট। তবে সে সময় বাজার তলানি থেকে উঠে আসছিল এবং বিনিয়োগকারীরা ছিল ফুরফুরে মেজাজে।

এ নিয়ে গত আট কর্মদিবসেই সূচক পড়েছে ৫৫৫ পয়েন্ট।

এ পরিস্থিতিতে বাজারে তারল্য বাড়াতে মার্জিন ঋণের সীমা বাড়িয়ে ১:১ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের যত টাকা রয়েছে, তারা সমপরিমাণ ঋণ নিতে পারবেন। এতদিন এটি ছিল ১:০৮। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ১০০ টাকার বিপরীতে ৮০ টাকা ঋণ নিতে পারতেন।

পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের তাদের তহবিলের বিপরীতে ঋণ দিয়ে থাকে। একে মার্জিন ঋণ বলে।