নতুন গ্যান্ট্রিতে বাড়বে বন্দরের গতি

দ্রুত ও নিরাপদ কনটেইনার হ্যান্ডলিং নিশ্চিত করতে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের বহরে যুক্ত হলো সর্বাধুনিক দুটি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি) ও তিনটি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি (আরটিজি)। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গতি বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে বন্দরের বহরে কি গ্যান্ট্রি ক্রেনের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬’তে।
শনিবার এসব কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে আসা ‘জেন হুয়া ১২’ নামে জাহাজটিকে দুটি শক্তিশালী টাগবোটের সহায়তায় বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের ৫ নম্বর বার্থে আনা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, চীনে তৈরি নতুন দুটি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন ও তিনটি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। আনলোড, ফিটিং, ট্রায়ালসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে দ্রুত এগুলো অপারেশনে যাবে। এর ফলে বন্দরের জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গতি বাড়বে। পাশাপাশি নিরাপদ কনটেইনার হ্যান্ডলিং নিশ্চিত হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ও সিসিটির দায়িত্ব পাওয়া শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের ক্যাপ্টেন তানভীর বলেন, বর্তমানে বন্দরের সিসিটিতে চারটি ও এনসিটিতে ১০টি কিউজিসি অপারেশনে রয়েছে। নতুন আসা দুটি কিউজিসি এনসিটি-৫ বার্থে বসানো হবে। এছাড়া আরটিজি আছে ৩৯টি। নতুন তিনটি আরটিজি রেফার ইয়ার্ডের অপারেশনে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্টের কারণে বন্দরের কার্যক্রম আরো নিরাপদ ও গতিশীল হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটিতে প্রথম গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয় ২০০৫ সালে। এরপর ২০১৭ ও ১৮ সালে এনসিটি ২, ৩ ও ৪ নম্বর বার্থের জন্য গ্যান্ট্রি ক্রেন আনা হয়।

অন্যদিকে, আমদানি পণ্য পরীক্ষায় স্ক্যানিং মেশিন থাকলেও যুগের পর যুগ রফতানি পণ্য পরীক্ষায় স্ক্যানিং মেশিনের সংকটে ভুগছে চট্টগ্রাম বন্দর। যার ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরাও পণ্য রফতানির আড়ালে অর্থপাচার বা মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য রফতানি করে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পান।

তাই রফতানি পণ্যে নিরাপত্তার ‘ঝুঁকি’ কমাতে ও বিশ্বমহলে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এবার সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে দুটি স্ক্যানার মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে বন্দরের ডাকা দরপত্রে সাড়া দিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। আগামী চার মাসের মধ্যে মেশিন দুটি সরবরাহের কথা রয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, রফতানি পণ্য পরীক্ষা করতে স্ক্যানার মেশিন না থাকায় বিপজ্জনক, নিষিদ্ধ ও অবৈধ পণ্য যথাযথভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। ফলে নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই দ্রুত স্ক্যানার মেশিন সংগ্রহের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মেশিন দুটি কেনার জন্য গত ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্রও ডাকে বন্দর। সে দরপত্রে কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সাড়া দিয়েছে। তাছাড়া মেশিন কেনার বিষয়ে গত ৪ মার্চ একটি প্রি বিড সভার কাজও সম্পন্ন শেষ করেছে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ।

এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, পণ্য ভর্তি কনটেইনার পরীক্ষা করতে স্ক্যানার মেশিন কেনা এবং তা পরিচালনার কাজ এতদিন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ করতো। এ প্রথম বন্দর সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে দুটি স্ক্যানার মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২১ মার্চ আমরা দরপত্র ডেকেছিলাম। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনেছে। এ বিষয়ে আমাদের সভা কার্যক্রমও এরমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আগামী চার মাসের মধ্যে স্ক্যানার মেশিন দুটি আমাদের কাছে সরবরাহ করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে আমরা কিনলেও মেশিন দুটি পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম কাস্টমস।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে গেটের সংখ্যা ১২টি। এরমধ্যে জেনারেল কার্গো বার্থে (১ নম্বর গেট) একটি, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (৩ নম্বর গেট) তিনটি ও চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে (২, ৪ ও ৫ নম্বর গেট) একটি করে স্ক্যানার মেশিন রয়েছে। এ সাতটি মেশিন দিয়ে শুধুমাত্র আমদানি পণ্যের পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ, এখন শুধুমাত্র আমদানি পণ্য স্ক্যানিং হয়েই বন্দর থেকে ছাড় পাচ্ছে। বিপরীতে কোনো ধরনের স্ক্যানিং ছাড়াই রফতানি পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।