দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে জরিপ তথ্য রয়েছে। বিশ্ব বাজারে তেল গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকায় এখন এই এলাকায় গ্যাসের অনুসন্ধানে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। ইতিমধ্যে ৩টি কোম্পানি এ জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বুধবার আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়েল আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ২২এ এবং ২২বি ব্লকে অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং উৎপাদনে বাপেক্সের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে ভোলা গ্যাসক্ষেত্রেও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি। এর আগেও এরিয়েল বাংলাদেশে কূপ খনন কাজ করেছে। তাদের একটি ড্রিলিং রিগ (কূপ খনন যন্ত্র) বাংলাদেশে রয়েছে।
উজবেকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী এ সুলতানভ বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসানকে এ বিষয়ে ইতিবাচক বিবেচনার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তাদের প্রস্তাব নিরীক্ষা এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে মতামত দিতে পেট্রোবাংলা ইতিমধ্যে বাপেক্স ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিকে (জিটিসিএল) চিঠি দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাপেক্সের ব্যবস্হাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্যাসের অনুসন্ধান-উৎপাদন বাড়াতে বাপেক্স অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুইটি ব্লকে গভীর কূপ খননের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। শরীয়তপুরেও একটি কূপ খননের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। এর বাইরে ভোলায় আরও কূপ খনন করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যেই ৪টি অনুসন্ধান কূপ খননের শিডিউল করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, ইতিমধ্যে যে উন্নয়ন কূপগুলো পরিত্যক্ত বা শেষ হয়ে গেছে সেগুলো থেকে আরও কিছু গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। এমন প্রায় ৪০-৫০টি কূপ রয়েছে। গ্যাসের দ্রুত সরবরাহ বাড়াতে এগুলোতে ওয়ার্কওভার বা সংস্কার খনন করা হলে অনেকখানি গ্যাস পাওয়া যাবে। এগুলোর পাশাপাশি স্থল এবং সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করতে হবে। আমাদের যে ভূগঠন তাতে স্থলভাগে এখনও গ্যাস পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সিলেট-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাইরে তেমন বড় কাজ এখনও হয়নি। গত ২০ বছরে মাত্র ২৫টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে। ফরিদপুর-যশোর অঞ্চল এবং নোয়াখালী অঞ্চলে গ্যাস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
বাপেক্স সূত্র জানায়, অনেকগুলো ওয়ার্কওভার কূপ খনন করার কাজ শুরু করেছে বাপেক্স। সালদা গ্যাসক্ষেত্রে একটি পরিত্যক্ত কূপে থাকা অবশিষ্ট গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে। এটি থেকে প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে। কৈলাশটিলার একটি কূপেও অবশিষ্ট গ্যাস পাওয়া গেছে। এটি থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেখানে গতি আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারে আগ্রহী সংস্হা পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কাজ চলছে। এখন যে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে তাতে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করা যাবে না। আমদানি বাড়াতে আরও ভাসমান এলএনজি লাগবে।