দেশে চলমান মেগা প্রকল্পের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণ কর্মযজ্ঞ অন্যতম। স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজের আর মাত্র সতেরো শতাংশ বাকি। অর্থাৎ মোট কাজের ৮৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট রেখে টানেলের সার্বিক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন টানেল প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী।
এ টানেলের দুই টিউবে খনন কাজ ইতোপূর্বে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে টানেল অভ্যন্তরে দুই টিউবের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ক্রস প্যাসেজের কাজ। এ ধরনের প্যাসেজ হবে তিনটি। দুটির কাজ সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। বাকিটি হবে এরপরে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এর পাশাপাশি প্রথম টিউবের পর দ্বিতীয় টিউবে স্লাব স্থাপন কাজও সমানতালে এগিয়ে চলেছে। টানেলের সিভিল ওয়ার্ক শেষ হওয়ার পর ইলেক্টিফিকেশনের কাজ শুরু করা হবে বলে জানানো হয়েছে। অপরদিকে, টানেলের পতেঙ্গা অংশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। অনুরূপভাবে দক্ষিণ পাড়ে অর্থাৎ আনোয়ারা অংশে সংযোগ সড়কের নির্মাণ এগিয়ে নিচ্ছে সড়ক ও জনপথ এবং সেতু বিভাগ।
প্রকল্প পরিচালক আবারও নিশ্চিত করেছেন, উচ্চমাত্রার ঝড় জলোচ্ছ্বাসে কোনভাবেই টানেল অভ্যন্তরে সমুদ্রের লোনা পানি যাতে ঢুকতে না পারে সে লক্ষ্য নিয়ে চউকের উদ্যোগে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে সিটি আউটার রিং রোড। চউকের প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় এ রিং রোড নির্মিত হয়েছে। তবে পতেঙ্গার শেষ অংশে নেভাল পয়েন্ট থেকে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে টানেলকে রক্ষার জন্য রিভাইসড (ডিপিপি) করা হয়েছে।
কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা। আর উত্তর পাড়ে চট্টগ্রাম শহর এলাকার শেষ পয়েন্ট পতেঙ্গার অবস্থান। পাশেই শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দর এলাকার পাশ দিয়েই নির্মিত হয়েছে সিটি আউটার রিং রোড, যা ফৌজদারহাট পর্যন্ত বিস্তৃত। অপরদিকে, দক্ষিণ পাড়ে অর্থাৎ আনোয়ারা অংশে ছয় লেনের এগারো কিলোমিটার সংযোগ সড়ক কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলেছে।
দিন যতই গড়িয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার বিষয়টি নিয়ে দেশের মানুষ অপেক্ষার ক্ষণগণনা করছে। চীনের সাংহাই শহরের আদলে চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউনে পরিণত করতে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের এ মহাযজ্ঞ। আগামী ডিসেম্বর মাসে এ কর্মযজ্ঞ শেষ হবার পর যখন চালু হবে তখন চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে কক্সবাজারগামী যেসব যানবাহন চলাচল করে সেসব অনায়াসে টানেল দিয়ে আনোয়ারা হয়ে পটিয়া এবং পরে পটিয়া হয়ে কক্সবাজার পৌঁছে যাবে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন হাবে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। এর পাশাপাশি চলছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ।