সাড়ে তিন শতাংশ কাজ শেষ হলেই পূর্ণতা পাবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু

স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে মূল সেতুর সাড়ে ৯৬ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে। স্বপ্ন পূরণে আর বাকি আছে মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ কাজ। এই কাজও শেষ হতে চলেছে দ্রুত। তারপরই পূর্ণতা পাবে স্বপ্নের সেতু। পূরণ হবে দেশের মানুষের বিশাল এক স্বপ্নের।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর চার লেনের সড়কে এখন চলছে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। পাশাপাশি চলছে সড়কবাতি বসানোর কাজও। এ দুটি কাজ শেষ হলে সড়কের সাইন-সংকেত ও মার্কিং বসানো হবে। এছাড়া সেতুর নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন বসানো ও রেলপথের পাশে হাঁটার রাস্তা তৈরির কাজ বাকি রয়েছে। এ কাজগুলো শেষ হলেই সেতু চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মাসেতুতে মোট ৭১৫টি সড়কবাতি বসানো হবে। ইতোমধ্যে ১০০ বাতি বসানো হয়েছে। পিচ ঢালাইয়ের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসের মধ্যেই এই কাজগুলো শেষ হবে বলে আশা করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সেতুর দুই পাশে টোলপ্লাজা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে আরও তিন বছর আগেই। এখন শুধু টোলপ্লাজায় সফটওয়্যার ও স্বয়ংক্রিয় অন্যান্য ব্যবস্থা যুক্ত করতে হবে। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এছাড়া সেতুর ভারি কোন কাজ বাকি নেই। কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করবেন সরকারের নীতনির্ধারকেরা।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পদ্মাসেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন সড়কের পিচ ঢালাই ও সড়কবাতি বসানোর কাজ চলছে। আর সামান্য কিছু টুকিটাকি কাজ বাকি আছে। এই কাজগুলো শেষ হলেই সেতু চলাচলোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে। পদ্মা সেতু চালুর তারিখ নির্ধারণ করবেন সরকারের নীতনির্ধারকেরা। তবে আশা করা হচ্ছে, জুনেই সেতু চালু হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মাসেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েক মাস আগেই জানিয়েছিল যে, আগামী জুনে সেতুটি উদ্বোধন করা যাবে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে সে অনুযায়ীই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জরুরি কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে জুনেই পদ্মাসেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সে হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু করা হবে।

৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সেতুর দুই পারে রয়েছে আরও প্রায় চার কিমি ভায়াডাক্ট। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মাসেতু। এর পর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়।

দ্বিতলবিশিষ্ট সেতুটির ওপর দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন, আর নিচ দিয়ে চলবে রেল। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেতুর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ শতাংশ।

দেশের দীর্ঘতম এই সেতু বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আর সেতুর ১৬৯ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেলপথ তৈরি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। এ অঞ্চল হবে দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোন।