বিদ্যুৎ পেল বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী দ্বীপের ২৫ হাজার গ্রাহক

পটুয়াখালী সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী। এ দ্বীপের জনগোষ্ঠীর কাছে ছয় মাস আগেও বিদ্যুৎ ছিল স্বপ্নের মতো। সন্ধ্যা নামলেই হারিকেন আর কুপির আলোই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন সেখানে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে।

নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল টেনে দ্বীপের প্রায় সাড়ে ২৫ হাজারের বেশি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলের ১ লাখ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় সেখানকার জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।

মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ থেকে শুরু করে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। তারই ধারাবাহিকতায় নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে রাঙ্গাবালীতেও।

পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান রাঙ্গাবালীর। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে আগুনমুখা, পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ ও পশ্চিমে রাবনাবাদ নদীবেষ্টিত এই উপজেলাটি। ২০১২ সালে বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করার পর এবং সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে এক ধরনের কর্মচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলাকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনতে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালীতে ১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। গলাচিপা নদী ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর (তেতিলিয়া নদী) দুইটি শাখার ৫ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার তলদেশ দিয়ে ১১ কেভি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এই উপজেলায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো হয়। এ জন্য ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৩ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে এক হাজার ২৪১ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের মাধ্যমে ১০৪টি গ্রামে ২৫ হাজার ৩৫৮ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। এই উপজেলাটিকে বিদ্যুতায়ন করতে ব্যয় হয়েছে ২৬০ কোটি টাকা।

রাঙ্গাবালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যুৎ পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন তারা। বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে পারবেন এমনটি প্রত্যাশা ছিল না তাদের। বিদ্যুতের আলো যেন এখন নতুন জীবন। বিদ্যুৎ আসায় এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ প্রযুক্তি ব্যবহারে সুফল পাচ্ছেন এলাকাবাসী।

চর মমতাজ ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ আসার কথা শুনে প্রথম প্রথম আমাদের গ্রামবাসী বিশ্বাস করতেন না, কারণ চারদিকেই নদী, এই নদীর মধ্যে এই দ্বীপে বিদ্যুৎ আসবে কীভাবে? পরে যখন বিদ্যুতের কাজ শুরু হলো তখন তারা বিশ্বাস করতে শুরু করলেন।

পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রাঙ্গাবালী সাবজোন অফিসের অফিসার্স ইনচার্জ মো. তৌফিক ওমর বণিক বার্তাকে বলেন, রাঙ্গাবালীতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আটটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুৎ সংযোগ টানা হয়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টম্বরে কাজ শুরু করে শেষ হয় গত বছরের অক্টোবরে শেষ হয়। এই লাইন টানতে ১৪ মাস সময় লেগেছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাশফাকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এই এলাকায় বিদ্যুৎ আসবে এটি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি এখানকার মানুষ। বিদ্যুতের বিষয়টি নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল তখনো মানুষকে বিশ্বাস করানো যায়নি। যখন বিদ্যুতের পিলারগুলো মানুষ দেখেছে তখন তারা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছে। এতো অল্প সময়ের ভেতর এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে- এটি ছিল কল্পনাতীত। এ এলাকার ১৩-১৪ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে যেটি মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এ উপজেলার একটা বিরাট অংশের মানুষ মৎস্যজীবী। মাছ সংরক্ষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো বরফ। এখন সেটি তাদের কাছে সহজলভ্য হয়ে গেছে। এর আগে বরফ আনতে গলাচিপা বা করাপাড়া উপজেলায় যেতে হতো।