ফেনীর দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে সমুদ্র উপকূলীয় বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হচ্ছে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাজারজাতকরণে সুবিধা থাকায় এখানকার সুস্বাদু ও মিষ্টি তরমুজ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার ভোক্তার কাছে। দুই বছর ধরে এসব এলাকায় তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক। বেড়েছে তরমুজের আবাদ।
জানা যায়, ২০১৭ সালে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আগত এক কৃষক পরীক্ষামূলক সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করেন। ওই বছর তার সাফল্য দেখে ২০১৯ সালে ৮-১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করে লাভবান হন। উৎপাদনে সম্ভাবনা ও ভালো দাম পায়।
পরে নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে আসা পেশাদার তরমুজ চাষিরা ২০২০ সালে সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ১০৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেন। তাদের দেখে ২০২১ সালে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে সোনাগাজীর বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে ভিক্টর সুগার, ওশেন সুগার, ব্লাক বেরী ও দেশীয় জাতের ৩৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাগাজীর চরাঞ্চলে জনমানবশূন্য বিস্তৃর্ণ ভূমি এখন তরমুজ চাষে সবুজে পরিণত হয়েছে। উপজেলার চরদরবেশ, চরছান্দিয়া ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে যতদূর চোখ যাবে, দেখা মেলবে তরমুজের আবাদ। অন্যদিকে দাগনভূঞার পূর্বচন্দ্রপুর ও জায়লস্করসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে চাষাবাদ শুরু করেছে।
একইভাবে ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন মো. হানিফ।
তিনি বলেন, সোনাগাজীতে উৎপাদিত তরমুজের আকার, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় কম সময়ে পাইকারদের আকৃষ্ট করা গেছে। তাছাড়া গত বছর সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে সাহেবের হাট সেতু উদ্বোধনের পর নোয়াখালী ও ফেনীতে যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি হয়। ফলে সোনাগাজীর চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের বাজারজাত সহজ হয়ে ওঠায় পাইকারি ক্রেতাদের কাছে এখানকার তরমুজের চাহিদা বেড়ে গেছে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সোনাগাজী থেকে সংগৃহীত তরমুজ সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া যায়।
সোনাগাজী উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান চৌধুরী জানান, এবার সোনাগাজীতে ব্লাক জায়ান্ট, গ্লোরি, সুগার বেবি, ট্রপিক্যাল ড্রাগন, বঙ্গলিংক ও ভিক্টর সুগার জাতের তরমুজ বেশি চাষ হয়েছে। নিয়মিত তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মূল্যায়ন কর্মকর্তা আবু নঈম মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, সোনাগাজীতে প্রকল্পের আওতায় ১০ জন কৃষককে তরমুজ চাষের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। আশা করি প্রদর্শনীর উৎপাদন ও লাভ দেখে কৃষক তরমুজ চাষে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, চরাঞ্চলে তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরো বেশি তরমুজ আবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।