মসলা চাষে পাহাড়ি চাষিদের সফলতার ছোঁয়া

এতদিন পাহাড়ি এলাকায় জুমচাষের সঙ্গে চাষিরা আদা-হলুদের চাষ করতেন। তবে এবার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পাহাড়ের জমিতে আমদানি নির্ভর উচ্চমূল্যের মসলা এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, আলুবোখারা, গোলমরিচের চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য তিন পার্বত্য জেলায় দুই হাজার ৬০০ একর জমিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এসব মসলার চাষ শুরু হয়েছে। আর দামি এসব মসলা উৎপাদনে ভালো লাভের আশা করছেন চাষি ও সংশ্লিষ্টরা।

পাহাড়ের চাষিরা বলছেন- এক সময় পাহাড়ে মসলা চাষ বলতে শুধু আদা-হলুদের চাষকে বোঝানো হতো। পাহাড়ের কৃষকদের কাছে উচ্চমূল্যের মসলা এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, আলুবোখারা, গোলমরিচের মসলা চাষ সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। বিভিন্ন মসলা চাষের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় জুম চাষের পাশাপাশি মসলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন পাহাড়ের চাষিরা।

এছাড়া সাথী ফসল হিসাবে বাগানে বিভিন্ন ফলমূলের চাষও সম্প্রসারণ হয়েছে। এ লক্ষ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চমূল্যের মসলা চাষ’ প্রকল্প নামে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে।

জানা যায়, রাঙামাটি শহরের পাশেই আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের বড়াদম এলাকায় পাহাড়ে দুই বছর আগে উন্নয়ন বোর্ডের পাইলট প্রকল্প শুরু হয়। বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দুই বছর আগে রোপণ করা বিভিন্ন ফসলের চারা ইতোমধ্যে বড় হতে শুরু করেছে। চাষিরা বাগান পরিষ্কার ও চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। চাষিরা আশা করছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর তারা মসলার ফসল ঘরে তুলতে পারবে।

বাগান মালিক রতন চাকমা ও বনলতা চাকমা বলেন, মসলার পাশাপাশি সাথী ফসল থাকায় বাগন সৃজনের খরচও কম হচ্ছে। এই বছর অনেক গাছে ফল এলেও আগামী বছর থেকে মসলা বাজারজাত করা যাবে। মসলা চাষের মাধ্যমে ভালো ফলন এবং ভালো আয়ের আশা করছেন তারা।

আরেক চাষি আশিষ চাকমা বলেন, মসলা চাষের সঙ্গে সাথী ফল হিসেবে পেঁপে চাষ করেছি। এই বছর প্রায় ৪০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। যার ফলে মসলা বাগানে পরিচর্যাসহ কিছু টাকা নিজেদের কাজেও লাগাতে পেরেছি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম মসলা চাষ প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে পাহাড়ের চাষিদের লাভবান কৃষিফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের টিকে থাকার জন্য সাথী ফসল চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী বছর কৃষকরা ফলন ঘরে তুলতে পারবেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডর চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, পাহাড়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মসলা প্রকল্পের শুরু। এই প্রকল্প ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে তিন পার্বত্য জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ৩৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬০০ চাষিকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।