প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কুয়াকাটা। এর রয়েছে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত। দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র। ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি অর্জন করেছে সাগরকন্যাখ্যাত কুয়াকাটা।
সমুদ্রের গর্জন, উথাল-পাতাল ঢেউ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, দীর্ঘতম সৈকত দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে। কিন্তু এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি বিমানবন্দর না থাকায় পর্যটকরা আসছেন না, এমনটাই দাবি করেছেন পর্যটননির্ভর প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোর্ড মালিক সমিতির সভাপতি জনী আলমগীর বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর করতে সরকার মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করেছে। এ মাস্টারপ্ল্যানে বিমানবন্দর আছে। কিন্তু দীর্ঘ বছরেও এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিমানবন্দর থাকলে আমরা কক্সবাজারের মতো সারা বছর বিদেশি পর্যটক পেতাম।
বিশাল সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। যার ডাকে সায় দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আকর্ষণে বারবার ছুটে আসে সৌন্দর্যলোভী পর্যটকরা। বিশেষ করে পুঞ্জিকার পাতার ছুটির দিনে ব্যাপক পর্যটকদের চাপ থাকে এখানে। এ সময় আবাসিক হোটেলগুলোর ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পর্যটক আসেন। একবার এলেই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটার প্রেমে পড়েন যে কেউ। বারবার বেড়াতে আসার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে ভ্রমণপিপাসুদের।
ছোট্ট একটি গ্রাম কুয়াকাটা সারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত। পর্যটকদের পদভারে মুখরিত কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র সুখ্যাতি অর্জন করেছে। কিন্তু বিমানবন্দর না থাকার কারণে সমৃদ্ধ হচ্ছে না সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা, এমনটাই দাবি করছেন আগত পর্যটকরা।
জানা গেছে, কুয়াকাটাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ বহু আগে শুরু হলেও মূলত ১৯৯৮ সাল থেকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত কুয়াকাটা সৈকত ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। পর্যটকদের কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল। এ কারণে বেড়েছে প্রশাসনিক নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
সৈকতের কোল ঘেঁষে রয়েছে বিশাল বনাঞ্চল। সুন্দরবনের পূর্বাংশ ফাতরার বন, লেম্বুর বন, নারকেলবাগান, ঝাউবাগান, গঙ্গামতী ও কাউয়ার চরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল অন্যতম। পর্যটকরা কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে আশপাশের পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি সমুদ্রের কোলঘেঁষা বনাঞ্চল ঘুরে ফিরে ছবি তোলেন। আকাশপথের সুযোগ না থাকায় দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা আসছেন না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটার পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী জাকারিয়া জাহিদ বলেন, কুয়াকাটায় জরুরি ভিত্তিতে আমাদের বিমানবন্দর দরকার। যদি বিমানবন্দর থাকত, তাহলে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি পর্যটক পেতাম। যেভাবে কক্সবাজারে এখন যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা কুয়াকাটায় সেভাবে পাচ্ছি না। যদিও কুয়াকাটাও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, কুয়াকাটার সঙ্গে আকাশপথের যোগাযোগব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্রের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিমানবন্দর হলে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসবেন। এতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে আমাদের কুয়াকাটা।
আভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের জেনারেল ম্যানেজার আল-আমিন বলেন, কুয়াকাটায় বিদেশি পর্যটকদের সেবা দেওয়ার মতো অনেক হোটেল আছে। কিন্তু বিমানবন্দর না থাকার কারণে বিদেশি পর্যটকরা খুব একটা আসছেন না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আব্দুল খালেক বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা। এখানে সড়কপথের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হলেও আকাশপথের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। বিমানবন্দর হলে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। বিমানবন্দর না থাকার কারণে পর্যটক কম আসছেন। তাদের আনতে গেলে এবং স্থানীয় ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার।