প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা কেবল প্রশিক্ষিতই হবে না দেশে-বিদেশে তাদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং আমাদের বেকার সমস্যা দূর হবে।
১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৫৬তম ব্যাচের ক্যাডেটদের ‘মুজিববর্ষ গ্রাজুয়েশন প্যারেড’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাডেমির গ্রহণযোগ্যতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সমুদ্র-বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী আমরা এ বছর জানুয়ারি থেকে পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে আরো চারটি মেরিন একাডেমির কার্যক্রম চালু করেছি।
তিনি বলেন, আশা করি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি আগামী দিনে উচ্চ প্রযুক্তির সামুদ্রিক জাহাজ পরিচালনার জন্য যথেষ্ট দক্ষ মেরিন ক্যাডেট তৈরি করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির প্রায় ৫ হাজার প্রশিক্ষিত ক্যাডেট সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতি বছর আমাদের অর্থনীতিতে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত করে থাকেন। এছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক পরিসরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে তারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে আমরা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠা করেছি। তিন বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব মেরিটাইম সাইন্স পাস কোর্সকে ২০১৫ সালে চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্সে উন্নীত করেছি। ২০১৮ সালে ‘মাস্টার অব মেরিটাইম সাইন্স’ চালু করেছি। প্রশিক্ষণকে যুগোপযোগী করতে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া মেরিন সিমুলেশন সেন্টারে ২০১৯ সালে ‘নেভিগেশন সিমুলেটর’ স্থাপন করেছি। এ বছর ‘ইঞ্জিন কন্ট্রোল সিমুলেটর’ স্থাপন করব। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিকে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অংশীদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে উন্নীত করেছি।
পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে সবসময় কাজ করবে। এর ফলে নিজেরও যেমন ভালো লাগবে, দেশের মান বজায় থাকবে এবং দেশ আরো উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, দু’বছর আগে তোমরা একাডেমিতে যোগদান করেছিলে। কঠোর প্রশিক্ষণ আর রুটিন মাফিক দৈনন্দিন চালচলন-তোমাদের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন তোমরা অনেক প্রতিকূলতার চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।
শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রচারণ কোনো সাধারণ পেশা নয়; এ পেশায় আত্মনিয়োগ করলে সমুদ্রের প্রতি একটা তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্য পরিবহন সমুদ্র পথেই হয়ে থাকে। আর আমাদের বে অব বেঙ্গল এ জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। তাই, বিশ্ব অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে মেরিন ক্যাডেটদের ভূমিকা অপরিসীম। জীবন ধারণের জন্য খাদ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ শিল্পায়নের যন্ত্রপাতির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর পরিবহন বিঘ্নিত হলে গোটা বিশ্বই স্থবির হবে।
এ সময় বৈশ্বিক মহামারির কারণে বহু সংখ্যক মেরিন অফিসার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সমুদ্রে আটকা পড়লেও মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে যথাযথ দায়িত্ব পালন করায় তাদের সাধুবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, আমরাও করোনাকালে অবিরাম দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মেরিন অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারদের ‘কি-ওয়ার্কার’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী বক্তৃতা করেন।