পোড়াদহ মেলায় একদিনে ৪ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় একদিনে ৪ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয়ে থাকে। প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ এলাকায় ইছামতী নদীর তীরে এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা উপলক্ষে জেলা জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ।

মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার পোড়াদহ মেলায় প্রায় ৪০০টির মত মাছের স্টল বসানো হয়েছে। প্রতিটি স্টল থেকে গড়ে এক লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। এ হিসেবে একদিনে ৪ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয় পোড়াদহ মেলায়।

তবে এবার মেলায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা হয়নি। মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় বাঘাইড় মাছ পোড়াদহ মেলায় কেনাবেচা ও প্রদর্শন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের গত ২৪ জানুয়ারি বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকনের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নিষেজ্ঞাধার কথা জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বগুড়ার বিখ্যাত পোড়াদহ মেলায় প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা হয়- যা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশে বাঘাইড় মাছ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। এজন্য পোড়াদহ মেলায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মৎস্য কর্মকর্তা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, র‍্যাব, ইউএনও, ওসি, মেলা কমিটিসহ ১৬ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

মেলায় স্টল বসানো মাছ ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার, আল-আমিন ও আব্দুল মালেক জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় মেলায় বাঘাইর মাছ তোলা হয়নি। তবে রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, কালবাউশ, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেনাবেচা হবে। এবার মেলায় মাছগুলো সর্বোচ্চ ৩০ কেজি ওজনের আছে। এবার ৪০০ মাছের দোকানে প্রায় ৪ কোটি টাকার মাছ কেনা-বেচা হবে।

তারা আরো জানান, এই মেলায় বাঘাইড় মাছ বেশি বিক্রি হত। মেলায় দুই মণ থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইড় মাছ আগে উঠানো হত। এবার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাঘাইড় মাছ নিয়ে আসা হয়নি।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ‘পোড়াদহ’ একটি বিশেষ স্থান। প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার পোড়াদহ এলাকায় ইছামতী নদীর তীরে এ মেলার আয়োজন করা হয়। বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরের মেলাটি একদিনের হলেও আশপাশের গ্রামগুলোতে জামাই উৎসব চলে তিনদিন। মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ। এ কারণে অনেকের কাছে পোড়াদহের মেলাটি মাছের মেলা হিসেবে পরিচিত। সেখানে পোড়াদহ মেলার পরেরদিন ‘বউ’ মেলা বসে। এ সময় সাধারণত নারীরা তাদের হরেক রকমের পণ্য কিনে থাকেন।

জানা গেছে, প্রায় ৪০০ বছর আগে মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটগাছ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে আশ্রম তৈরি হয়। এক পর্যায়ে স্থানটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে। পরবর্তীতে সেখানে মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রায় ২৫০ বছর ধরে পোড়াদহ মেলা হয়ে আসছে।

মেলার আয়োজকদের একজন শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, এবার মেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০ স্টল বসানো হয়েছে। তবে আগের তুলনায় এবার মাছের স্টল কম বসেছে।