লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সকল ক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর সুফল পাচ্ছে জনসাধারণ। প্রতিদিন রাজস্বের হার বাড়ছে সরকারের। ডিজিটাল বাংলাদেশের এমন ছোঁয়া লেগেছে লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে আয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অনেকটাই ভোগান্তি কমেছে সেবাপ্রাপ্তিদের।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য থাকত প্রতিনিয়তই। হয়রানির শিকার হতো নতুন পাসপোর্টধারী কিংবা বিদেশগামী প্রবাসীরা। ঐ সময় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন দালাল আটক করে শাস্তি দিলেও বন্ধ হয়নি জনসাধারণ হয়রানি।

পরবর্তীতে আঞ্চলিক অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই কার্যালয়ে দালালের দৌরাত্ম কমে যায়। ফলে এখন দালাল ছাড়াই সর্বোচ্চ সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। এতে গত ১৫ মাসে ৪১ হাজার ২৯৮টি আবেদন জমা পড়ে। ই-পাসপোর্ট সম্পন্ন হওয়ায় ৩৪ হাজার ৩৮৪টি পাসপোর্ট গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার ৯৩১ টাকা সরকারি রাজস্ব আয় হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে জেলায় ই-পাসপোর্ট আবেদন নেয়া শুরু করে লক্ষ্মীপুর অফিস। শুরুতেই কম আবেদন পড়লেও ১৫ মাসের মাথা তা কয়েক গুণ বেড়েছে। ই-পাসপোর্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে অফিস কর্তারাও। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করছে তারা।

সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউপির শহর কসবা গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ই-পাসপোর্ট জমা দিয়েছি। জমা দিতে তিনি কোনো ধরনের সমস্যা দেখতে পাননি। হয়রানি মুক্তভাবে আবেদন জমা দিয়েছি।

একই উপজেলার মান্দারী এলাকার মো. রেজাউল করিম জানান, সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট আবেদন করার পর কয়েকদিন আগে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। পাসপোর্ট এ মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ও স্মার্ট কার্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেয়া হয়েছে। সেসব তথ্য চিপে যুক্ত আছে। সরকারের এই উদ্যোগের কারণে মানুষের হয়রানি ও জটিলতা অনেক কমে যাবে বলে জানায় সুবিধাভোগী রেজাউল।

ই-পাসপোর্ট মূলত ঢাকা অফিস থেকে প্রদান করা হয়। এ লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসের ২ জন কর্মকর্তা সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট এর ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। সবার জন্য ই-পাসপোর্ট সেবা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ই-পাসপোর্ট পদ্ধতিতে পাসপোর্ট গ্রহীতারা সহজে আবেদন করতে পারেন। এতে ভোগান্তি কমেছে এবং দ্রুত সেবা পাচ্ছে। তবে ফরম পূরণের সময় ছবি সত্যায়িত করা লাগবে না।

শুধু তাই নয়, ই-পাসপোর্টে মুঠোফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের চিপ থাকে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় আবেদনকারীর ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেয়া হয়। সেসব তথ্য চিপে যুক্ত থাকে। বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ বা জরুরি উভয় ভাবেই আবেদন করা যায়।

৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট জন্য সাধারণ ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতি জরুরি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ৬৪ পৃষ্টা ৫ বছরের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতি জরুরি ১২ হাজার ৭৫ টাকা।

ই-পাসপোর্ট ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতি জরুরি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। ৬৪ পৃষ্টার জন্য ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতি জরুরি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। তবে ২ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজে করিয়ে ঢাকা থেকে পাসপোর্ট নিতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে ম্যানুয়ালি পাসপোর্ট ছিল। তা এখনো আছে। তবে সেটা আস্তে আস্তে বিবর্তন হচ্ছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন ই-পাসপোর্টের আবেদন হচ্ছে। সহজেই গ্রাহকরা ই-পাসপোর্ট হাতে পেতে পারে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রদক্ষেপ নিয়েছি। ই-পাসপোর্টের প্রতি মানুষের যেন আগ্রহ বাড়ে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও করছি। লক্ষ্মীপুর অফিসে যোগদান করার পর থেকেই দালালের দৌরাত্ম কমেছে। হয়রানি ও ঝামেলা মুক্ত সেবা দিতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। সেটা আমরা বদ্ধপরিকর।