টিকার আওতায় আসছে কওমি মাদ্রাসা, বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রম

কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকার আওতায় আসছে দেশের সব কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, যৌনপল্লীতে বসবাসরত জনগোষ্ঠী এবং ভাসমান পেশাদার যৌনকর্মী। এ ছাড়া স্কুলবহির্ভূত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী, ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থী, বিজিএমইএ, বিকেএমইএভুক্ত শিল্পকারখানা কর্মী, শিশু সদন, এতিমখানা, অনাথ আশ্রমের শিশুরাও পাবে এ টিকা। বাদ যাবে না ভাসমান জনগোষ্ঠী, দোকান, রেস্তোরাঁ, পোলট্র্রি, ডেইরি কর্মচারী এবং রিয়েল এস্টেট ও গৃহনির্মাণ শ্রমিক। সম্প্রতি দেশের নির্ধারিত জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে এ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিগগিরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ টিকাদান কর্মীরা কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রথম ডোজ টিকাদানের ক্ষেত্রে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর ছাড়া সারাদেশে সিনোফার্ম দেওয়া হবে। ঢাকা শহরের গৃহহীন, ভ্রাম্যমাণ, উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে জনসন অ্যান্ড জনসন টিকা দেওয়া হবে। বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে ঢাকা, রংপুর ও খুলনা বিভাগের অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং দেশের অন্য বিভাগে মডার্না টিকা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, কোভিড প্রতিরোধে দেশে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রথম ডোজ প্রদানের কার্যক্রম চলমান। বুস্টার ডোজ প্রদানের ক্ষেত্রে জনগোষ্ঠীর বয়সসীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। এমনকি ভাসমান জনগোষ্ঠীর জন্য জনসন টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চঘাট, বাজার এলাকায় অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ টিকাদান কর্মীরা টিকা দেবেন।

তিনি বলেন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের টিকাদান অনেকাংশে সম্পন্ন হতে চলেছে। তবে টিকার বাইরে যেসব শিক্ষার্থী রয়ে গেছে বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা, ‘এ’ লেভেল ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী এবং ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া কিছু গার্মেন্টস ও ইপিজেডগুলোয় বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে। পুরান ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় ছোট ছোট অনেক কারখানা রয়েছে, যাদের কর্মীরা কেউই টিকা নেননি। তাদেরও টিকাদানের আওতায় আনা হবে। অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, আশা করছি আগামী মার্চের শেষ নাগাদ টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে।

অধিদপ্তরের টিকাদান সম্পর্কিত নতুন পরিকল্পনায় দেখা গেছে, দেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা টিকাদানের বাইরে থেকে গেছে। তাই সিটি করপোরেশনসহ যেসব জেলায় বড় মাদ্রাসা রয়েছে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সেসব এলাকায় গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের টিকাদান কর্মীরা টিকা দেবেন। এক্ষেত্রে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে। এমনকি অন্য জেলা ও উপজেলায় অবস্থিত কওমি মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যমান টিকাকেন্দ্র বুথ নির্দিষ্ট করে টিকা দেওয়া হবে।

১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী যারা ‘এ’ লেভেল ‘ও’ লেভেল পর্যায়ে লেখাপড়া করছেন তাদের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনের ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে জন্মনিবন্ধন সনদের মাধ্যমে সুরক্ষায় নিবন্ধন করে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া দেশের অন্য জেলায় বিদ্যমান ফাইজার কেন্দ্রে একইভাবে ওই জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া স্কুলবহির্ভূত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যারা বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করেন, তাদের টিকাদানের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসন ও সমাজকল্যাণ কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বৃদ্ধাশ্রম চিহ্নিত করে সেখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রণয়ন করবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচার অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন-বিজিএমইএ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচার অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন-বিকেএমইএভুক্ত শিল্পকারখানার কর্মীরা এখনো সবাই টিকা পাননি। তাদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন তাদের নতুন তালিকা প্রণয়ন করে টিকা দেওয়া হবে।

দেশের শিশু সদন, এতিমখানা, অনাথ আশ্রমে যারা বসবাস করে তারাও রয়ে গেছে টিকার বাইরে। তাই তাদের টিকার আওতায় আনতে জেলা প্রশাসন ও সমাজকল্যাণ কার্যালয়ের মাধ্যমে তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় এদের টিকা দেওয়া হবে।

ঢাকা শহরে প্রচুর মানুষ ভাসমান জীবনযাপন করেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ টিকাদলের সহযোগিতায় তাদের জনসন অ্যান্ড জনসন টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সারাদেশের জেলা স্বাস্থ্য, প্রশাসন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের সমন্বয়ে ওই জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।