এক জমিতে একাধিক ফসল ও সবজি চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তনে শূন্য থেকে কোটিপতি কৃষক আমীর হোসেন। এবার দুটি বেগুন গাছ দিয়েই কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
তার রোপণ করা দুটি গাছে প্রায় এক মণ বেগুন ঝুলছে, যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। তবে বাজারে বিক্রি না করে বেগুনগুলোর বীজ কৃষকদের বিলিয়ে দিতে চান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত এ কৃষকের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামে। ৬ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ শুরু করে কোটি টাকার ওপরে সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।
আমির হোসেন বলেন, বর্তমানে আমি এক বিঘা জমিতে মালটা, এক বিঘায় কলা, ১৫ শতাংশে আখ, ১০ শতাংশে কচু, ১০ শতাংশে লেবু, ৫০ শতাংশে গোল আলু, এক বিঘায় পেয়রা চাষ করছি।
এসব চাষাবাদের পাশাপাশি আমি দুটি বেগুন গাছের চারা রোপণ করেছি। যার উচ্চতা এখন ১০ থেকে ১২ ফুট। গাছ দুটিতে এখন প্রায় এক মণ বেগুন আছে। যা বীজ করার জন্য রেখেছি। আমি এ বেগুনের চারাগুলো কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে দিবো।
সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি মাসে একবার আমির ভাইয়ের বাগানে যাই কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে। আমির ভাইয়ের পরামর্শ নিয়ে আমি বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করেছি।‘
সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের গাছাবাড়ি গ্রামের কৃষক ছাইদুর রহমান বলেন, আমি কৃষক আমির হোসেনের পরামর্শ নিয়ে নতুন উদ্যোমে কৃষি কাজ শুরু করেছি। এবার আমির হোসেনের বেগুনের গাছ দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমার জীবনে এতো লম্বা বেগুন গাছ দেখিনি।
সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরশাদ আজিজ রোকন বলেন, সাঘাটায় কৃষিতে সফলতার অনন্য উদাহরণ আমির হোসেন। এবার লম্বা বেগুনের নতুন জাত নিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, আমির হোসেন কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক। আমরা নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে আমির হোসেনের ফল ও ফসলি জমি পরিদর্শনসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি।
জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি বলেন, আমি কৃষক আমির হোসেনের বিভিন্ন কৃষি প্রতিবেদন দেখার পর সরেজমিনে তার বাগানে গিয়ে অবাক হয়েছি। কৃষিতে আমির হোসেনের সফলতায় আমি মুগ্ধ। তার মতো সফল কৃষক আমাদের জেলার অহংকার।
কৃষক আমির হোসেন ধার-দেনা করে ৫ হাজার টাকায় ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৬ শতক জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে নিজেকে সফল চাষি হিসেবে আবিষ্কার করেন। বর্তমানে প্রতি বছর উৎপাদন খরচ বাদে তার আয় হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। তার কৃষি কাজে সহযোগিতা করেন স্ত্রী করিমন বেগম।
তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বড় ছেলে আয়নুর রহমান স্নাতক পাসের পর বর্তমানে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত। এইচএসসি পর্যন্ত পড়ার পর বড় মেয়ে লিপি বেগমকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। ছোট মেয়ে আরাফা আক্তার এ বছর বগুড়ায় স্নাতকে অধ্যয়নরত।