২৪তম বড় অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ

২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্বের ২৪তম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ‘জাতীয় মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১’ (এনএইচডিআর) তে এমনটা দাবি করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার ইআরডির ওয়েবসাইটে ২৩৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

ইআরডি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলেও এটি তৈরিতে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অফিসের সাবেক পরিচালক সেলিম জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর এম এম আকাশসহ দেশের আট খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির মারাত্মক প্রভাবের কারণে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং মানুষের আয় কমে যাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশও একটি ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

তবে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) তাদের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৪তম বড় অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গত ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২২’ নামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে এই পূর্বাভাস দিয়েছে সিইবিআর।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ গড়ে ৭ শতাংশের ওপরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জন করেছে। আর এর ফলে তিন দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৯ গুণ বেড়ে ২০২০ সালে ৩৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৩৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৩০০ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৬৪ ডলার হয়েছে। বেড়েছে প্রায় সাত গুণ। দারিদ্র্যের হার ৫৮ শতাংশ থেকে কমে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে।

গত তিন দশকে বাংলাদেশের মানুষের আয়ুও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; ৫৮ বছর থেকে ৭২ দশমিক ৬ বছর হয়েছে। প্রায় ১৫ বছরের বৃদ্ধি হয়েছে। এনএইচডিআর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুলে পড়ার প্রত্যাশিত বছরগুলো-যে বছরগুলো স্কুল বয়সের একটি শিশু শিক্ষা গ্রহণের আশা করতে পারে-সেটা ১৯৯০ সালের ৫ বছর থেকে ২০১৯ সালে ১১ বছর হয়েছে।

ভারতের ৭০ বছর এবং পাকিস্তানের ৬৭ বছরের বিপরীতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৭২ দশমিক ৬ বছর আয়ু অর্জন করেছে। বাংলাদেশে ১০০ জন জীবিত জন্মের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার ২৮, ভারতে ৪৮ এবং পাকিস্তানে এই হার ৮১। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ তার চিত্তাকর্ষক অগ্রগতির জন্য প্রশংসিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা ও সম্পৃক্ততা লক্ষণীয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৭ জন শান্তিরক্ষী ৪০টিরও বেশি দেশে জাতিসংঘের মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মোট ৬ হাজার ৭৩১ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মানব উন্নয়নের গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করবে। আর সেই বাধা মোকাবিলার জন্য অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করা অপরিহার্য বলে প্রতিবেদনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারির কারণে, অবৈতনিক পরিচর্যা কাজের জন্য মহিলাদের সময় বরাদ্দ ৫১ শতাংশ এবং অবৈতনিক গৃহকর্মের জন্য ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, করোনার প্রভাব প্রান্তিক এবং গরিব জনগোষ্ঠীর ওপর বেশি হবে এবং তাদের এটি থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে।
বেশির ভাগ শিক্ষা এখন অনলাইনে থাকায় দরিদ্র পরিবারের ছাত্ররা অসুবিধায় পড়বে বলে প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে লকডাউন বিধিনিষেধের কারণে মুখোমুখি মিটিং, সামাজিক জমায়েত, সরাসরি জনসাধারণের মিথস্ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। পেশাদার, অফিশিয়াল এবং বিনোদন উদ্যোগগুলো, বেশ কিছু সময় ধরে উদ্ভাবনী উপায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এগুলো নতুন বাস্তবতার সাথে বিশ্বে মিথস্ক্রিয়া এবং ব্যবসার জন্য নতুন আইসিটিভিত্তিক উদ্যোগের জন্ম দিতে পারে।