জনশক্তি রপ্তানিতে গতি ফিরেছে

মহামারির ধাক্কা সামলে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসন প্রক্রিয়া। সবশেষ ডিসেম্বর মাসেই রেকর্ড ১ লাখ ৩১ হাজার দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী বিদেশ গিয়েছেন। জনশক্তি রপ্তানিতে এক মাসের হিসাবে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এছাড়াও দেড় বছর বন্ধ থাকার পর চলতি সপ্তাহে ২০৩ জন কর্মী নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক যাচ্ছেন সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনায় থমকে থাকা শ্রমবাজার ফের সচল হওয়াটা দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ গত বছর তাদের পাঠানো রেকর্ড ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে মহামারির উত্তাপ অনেকাংশে কমিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের শ্রমবাজারগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি না বাড়াতে পারলে ২০২২ সালে ২৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে। এদিকে প্রায় ৩ বছর পর আগামী মাস থেকে চালু হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এছাড়াও করোনার কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ওভারসিস এমপস্নয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিস (বোয়েসেল)।০

অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানিকারক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো জানিয়েছে, সৌদি আরব-আমিরাত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে করোনা বিধিনিষেধ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে কর্মী চাহিদা বেড়েছে। এছাড়াও সৌদিতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের কোটা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ানোর ফলে ব্যাপক কর্মীর দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ডিসেম্বরেই প্রায় ৭০ হাজার কর্মী নিয়েছে দেশটি। তবে সৌদি আরব ও দুবাইতে যাওয়া বেশিরভাগ কর্মীই পরিচ্ছন্নতা ও নির্মাণ কর্মী। তাদের মাসিক বেতন ২০-৩০ হাজার টাকা। যারা ড্রাইভার বা রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনার টেকনিশিয়ান হিসেবে গিয়েছেন তাদের বেতন ৪০ হাজার টাকার ওপরে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর (বিএমইটি) সহকারী পরিচালক রাহেনুর ইসলাম জানান, চলমান মহামারিতে প্রায় ৪ লাখের বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মস্থলে যেতে পারে। তবে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে প্রায় আড়াই লাখ কর্মী দেশ ত্যাগ করেন যা এ খাতে স্বস্তি ফিরিয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। দক্ষকর্মী তৈরির বিষয়ে সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কাজ করে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার ও তাদের সংস্থা অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহুমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। এটা ঠিক যে, এবার বেশিরভাগ শ্রমিকই আধা দক্ষ। কিন্তু তারা যে কাজের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে সে কাজে কোনো বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন ছিল না।

তিনি জানান, স্বাস্থ্য কর্মীসহ দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ নিয়ে আমরা কয়েকটি গন্তত্মব্য দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিএমইটি-এর তথ্যমতে বর্তমানে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ৭৩টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলমান আছে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে আরও ৪০টি প্রতিষ্ঠান এ বছরই কাজ শুরু করবে। যেখানে ২ বছর মেয়াদে ১৭টি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

তবে পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৭০ হাজার কর্মী এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে মাত্র ৩০ হাজার কর্মী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৭,৩৮৮, ২০১৮ সালে ৬১,৭৫৩ এবং ২০১৯ সালে ৬৬ হাজার ৯২১ জন।