মা-বাবা পোশাক শ্রমিক। ১০ বছর ধরে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। এ কারণে দিনাজপুরে নানাবাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করেছেন রাকিবুল ইসলাম। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পুলিশে চাকরি করবেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছেন পুলিশের চাকরির জন্য অনেক টাকা ঘুষ দিতে হয়। এ কারণে স্বপ্ন দেখলেও টাকার অভাবে পুলিশে চাকরির জন্য আবেদন করছিলেন না।
যোগ্যতা-পড়াশোনা থাকলেও টাকার অভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছিল রাকিবুল ইসলামের। এমন সময় পুলিশে চাকরির সুযোগ পেয়ে ১০০ টাকা দিয়ে আবেদনও করলেন। মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে দিনাজপুর জেলা পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেলেন।
পুলিশের চাকরি পেয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দিনাজপুর সদরের কাউগার গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম-রেবেকা বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান রাকিবুল ইসলামের। অথচ একদিন আগেও কল্পনা করেননি কোনো প্রকার ঘুষ-দালালি ছাড়াই তার পুলিশে চাকরির স্বপ্ন পূরণ হবে।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশে চাকরি পেয়ে আমি গর্বিত। ঘুষ-দালালি ছাড়াই চাকরি পেয়েছি, এমনকি আবেদন ফি ও কাগজপত্র ফটোকপির ১২০ টাকাও ফেরত পেয়েছি। কোনোদিন নিজেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়াব না।
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বর্ষা রানী রায় বলেন, স্বপ্ন ছিল পুলিশের চাকরি করব। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে বড় হয়েছি- কখনো এ স্বপ্ন পূরণ হবে ভাবিনি। আজ চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
তিনি আরো বলেন, যে ১০০ টাকা দিয়ে আবেদন করেছিলাম সেটি পুলিশ সুপার স্যার ফেরত দিয়েছেন। একই সঙ্গে একটি ২০ টাকার নতুন নোট দিয়েছে। এই ১২০ টাকা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। যতদিন বেঁচে থাকব, নোট দুটি যত্ন করে রাখব।
রাকিবুল ও বর্ষার মতো আরো ৬০ জন মাত্র ১০০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়েছেন। শনিবার সকালে তাদের নিজ কার্যালয়ে ডেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে আবেদন ফি ১০০ টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি বাবদ যে ২০ টাকা খরচ হয়েছে তা ফেরত দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া ৬২ জনের মধ্যে অনেকেই দিনমজুর, ভ্যানচালক, গার্মেন্টস কর্মী, কৃষক ও শ্রমিকের সন্তান। তাদের পেয়ে আমরা গর্বিত। আইজিপির নির্দেশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে স্বচ্ছতা প্রতীয়মান হয়েছে- তা আমাদের জন্য অনেক বড় সাফল্য।