মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কুচিয়া। বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে এটি।
তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার খাল-বিল, ডোবা ও জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে এই কুচিয়া মাছ। এ কুচিয়া সংগ্রহ করেই বছরের বেশিরভাগ সময় জীবিকা নির্বাহ করে এখানকার হতদরিদ্ররা।
সাধারণত কাদা মাটিতেই কুচিয়ার বসবাস। কাদা খুঁড়ে এগুলো সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তাড়াশ উপজেলায় ড্রাম পদ্ধতিতে কুচিয়া প্রজনন ও চাষ শুরু হয়েছে। তাড়াশ ও রায়গঞ্জের কুচিয়া চীন, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রফতানি হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সহায়তায় উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া চাষ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বারুহাস, মাধাইনগর ও দেশীগ্রাম ইউনিয়নে একটি কমিটি তৈরি করে যাবতীয় উপকরণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কুচিয়া চাষ করা হচ্ছে।
রায়গঞ্জের জলিল মাহাতো ও শ্যামল চন্দ্র মাহাতো জানান, প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। কুচিয়া চাষ করে অচিরেই দারিদ্র্যকে জয় করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।
স্থানীয় বাজারের কুচিয়া ব্যবসায়ী বিরেন চন্দ্র দাস জানান, একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন কুচিয়ার খামার। কুচিয়া রাখার জন্য একটি টাংকি পাকা করে এর মধ্যে পানি রেখে চাষ শুরু করেন। কুচিয়ার খাবার হিসেবে দেওয়া হয় কেঁচো, ছোট মাছ, শুঁটকি এবং মাছের খাবার।
আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম জানান, বর্তমানে তার খামারে প্রায় তিন মণ কুচিয়া রয়েছে। এটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন খাল-বিলে যারা কুচিয়া ধরে তাদের কাছ থেকে বাচ্চা কুচিয়া ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনে এনে খামারে রেখে বড় করা হয়। এরপর ৭০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। একটি কুচিয়া এক কেজির বেশি ওজনের হয়।
তাড়াশের বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল কুচিয়া চাষ প্রকল্পের সভাপতি তপন কুমার উরাও জানান, কুচিয়া চাষের জন্য উপজেলা মৎস্য অধিদফতরের সহযোগিতায় যাবতীয় উপকরণসহ প্রতিটি প্রজেক্টে এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এক বছর পর খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা লাভ হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, বর্তমান সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া চাষ শুরু করা হয়েছে। কুচিয়া চাষ এখন খুবই লাভজনক পেশা। কুচিয়া চাষে আগ্রহীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এনএটিপি প্রকল্প থেকে তাদের কুচিয়া চাষের পাকা হাউজ নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ক্ষুদ্র আকারে অল্প পুঁজিতে হাউজ পদ্ধতিতে কুচিয়া চাষ করে বেকাররা অল্প সময়েই স্বাবলম্বী হতে পারবে।
রায়গঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ এলাকার বেশকিছু তরুণকে কুচিয়া চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকায় কুচিয়া চাষ করছে। অনেকেই কুচিয়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে। এটি আবার চালু হলে পর্যায়ক্রমে সবাইকে কুচিয়া চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।