উন্নয়নের মহাসড়কে আদমদীঘি

ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল পাড়ের উপজেলা আদমদীঘি। বগুড়ার জেলা সদর থেকে পশ্চিমে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলা জনপদ। এই উপজেলা উন্নয়নের দিকে থেকে বরাবরই ছিল পিছিয়ে। কিন্তু উন্নয়নের রোল মডেল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিছিয়ে থাকা আদমদীঘি উপজেলাকে দিয়েছেন উন্নয়নের ছোঁয়া। তিনি উপজেলাটিকে তুলে দিয়েছেন উন্নয়নের মহাসড়কে।

বিদ্যুত ব্যবস্থা ॥ সান্তাহার শহরের সাহেবপাড়ায় রেলওয়ের পতিত ভূমিতে প্রায় সোয়া ৩শ’ কোটি টাকায় ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট (জরুরীভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র) এবং সম্প্রতি সান্তাহার ও উপজেলার নসরতপুরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুতের দুটি উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং ডজন খানেক ফিডার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিদ্যুত বিক্রয়-বিতরণ এবং সরবরাহ ব্যবস্থা মজবুত অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এই উপজেলায় শুধু পিডিবির গ্রাহক সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রায় চার বছর পূর্বে পিডিবি এবং আরইবি কর্তৃপক্ষ এই উপজেলাকে শত ভাগ বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করার তালিকায় স্থান দিয়েছেন। নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রোকনুজ্জামান উল্লেখিত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বিদ্যুত ও সোলারের আলোতে গ্রাম- শহর এখন একাকারপ্রায়। রাতের বেলা গ্রামের পাড়া-মহল্লায় চলতে এখন আর টর্চলাইটের তেমন প্রয়োজন পড়ে না।

এশিয়ার প্রথম মাল্টি স্টোরিড ওয়্যার হাউস ॥ শেখ হাসিনার ইচ্ছাতে ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এশিয়ার মধ্যে প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং সোলার সিস্টেম সংবলিত বহুতল বিশিষ্ট ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার চাল সংরক্ষণাগার (মাল্টি স্টোরিড ওয়্যার হাউস) নির্মিত হয়েছে। অবশ্য বেশ আগে থেকে উপজেলার সান্তাহারে থাকা দেশের অন্যতম বড় কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার (সিএসডি), যার ধারণ ক্ষমতা ৭০ হাজার মেট্রিক টন, উত্তর জনপদের সব বড় লোকাল স্টোরেজ ডিপো ( এলএসডি), ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার মেটিক টনসহ মোট ৩ এলএসডির মোট ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন এবং ২৫ হাজার মেট্রিক টনের খাদ্যশস্য সাইলো (গম সংরক্ষণাগার) মিলে দেশের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য সংরক্ষণাগার রয়েছে। সব মিলে এই উপজেলায় সরকারী খাদ্য মজুদের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। যা এ অঞ্চলের সরকারী খাদ্য মজুদ ব্যবস্থাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে।

কৃত্রিম মৎস্য প্রজনন, বিপণন ও চাষ খাত ॥ শেখ হাসিনা সরকারের নানা দেয়া সুযোগ-সুবিধায় কৃত্রিম মৎস্য প্রজননে সারাদেশে সুনাম অর্জন করেছে আদমদীঘি উপজেলা। বর্তমানে তরল সোনা তথা কৃত্রিম মৎস্য প্রজনন ও বিপণন এবং মাছ চাষ খাত মজবুত অবস্থানে রয়েছে। সরকারী মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শুধু বেসরকারী পর্যায়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ৭০টি মৎস্য প্রজনন হ্যাচারি। মৎস্য প্রজনন ও চাষ এবং বিপণন খাতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে লাখো মানুষ। সান্তাহারে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং প্লাবন ভূমি উপকেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার। নড়বড়ে গবেষণার নিয়েও এই উপকেন্দ্রের ইনচার্য ড. ডেভিড রিন্টু দাসের নেতৃত্বাধীন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাগণ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে একের পর এক বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজনন করতে সক্ষম হয়েছে।

পতিত জমিতে শিল্পায়নের হাতছানি ॥ শেখ হাসিনা সরকারের উদার শিল্পনীতির কারণে সারাদেশের মতো সান্তাহারসহ আদমদীঘি উপজেলায় বেসরকারী খাতে শিল্পায়ন গড়ে উঠছে দিনকে দিন। এ্যাগ্রো ফুড এবং প্লাস্টিক পণ্য এবং মৎস্য হ্যাচারিসহ নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে বিস্তর আবাদি জমি। অথচ, রেলের বিপুল পরিমাণ পতিত জমিতে শিল্পায়ন করা হলে আবাদি জমি রক্ষা করা সহজ হবে। দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে জংশনের মধ্যে সান্তাহার একটি। সান্তাহারের বৃহৎ ট্রানশিপমেন্ট ইয়ার্ড বিলুপ্ত করা হয়েছে অনেক আগে। এই প্রতিষ্ঠানের সর্ব দক্ষিণে খাদ্যশস্য সাইলো থেকে শুরু করে বিলুপ্ত ইয়ার্ড, রাসায়নিক সারের বাফার স্টক গুদাম এবং খাদ্য সাইলো সড়কের পশ্চিম দিক দিয়ে থাকা রেলওয়ের পরিত্যক্ত ড্রাইভার কলোনী, সুইপার কলোনী এবং ইয়ার্ড কলোনীজুড়ে রয়েছে রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ পতিত জমি। যা শিল্পায়ন সংক্রান্ত উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হলে বদলে যাবে এলাকার অর্থনৈতিক চেহারা। কর্মস্থান হবে হাজার হাজার মানুষের। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে উন্নয়নের রোল মডেল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, এশিয়ার মধ্যে প্রথম নির্মিত মাল্টি স্টোরিড হাউস বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বহুতল বিশিষ্ট চাল সংরক্ষণাগার উদ্বোধন করতে আসেন।

অন্যান্য উন্নয়ন ॥ শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছাতে আদমদীঘি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা ছাড়াও আরও প্রায় দুই শ’ কোটি টাকায় আঞ্চলিক মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মোট কথা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী উন্নয়নমূলক কাজ করার ফলে মানুষের জীবন যাত্রামানের প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে। উপজেলায় ইতোমধ্যে প্রায় দুই শ’ জন ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন এবং নিষ্কণ্টক খাস জমি প্রাপ্তি সাপেক্ষে অবশিষ্ট ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।