বাংলাদেশের টাকার মান পাকিস্তানের রুপির দ্বিগুণ

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের ১ রুপিতে মিলত বাংলাদেশের ১ দশমিক ৬৫ টাকা। অর্থাৎ তখন টাকার চেয়ে পাকিস্তানি রুপি ছিল অনেক শক্তিশালী। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে এখন ঠিক উল্টো চিত্র। পাকিস্তানি রুপির চেয়ে টাকার মান এখন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। বাংলাদেশের ১ টাকায় এখন মিলছে পাকিস্তানে ১ দশমিক ৯৮ রুপি।
শুধু তাই নয়, আরেক প্রতিবেশী দেশ ভারতের রুপির ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে বাংলাদেশের টাকা। ভারতীয় রুপির চেয়েও টাকার মান ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে ১ ভারতীয় রুপির পেছনে ব্যয় হচ্ছে ১ টাকা ১০ পয়সা। বছরখানেক আগেও এই হার ১ টাকা ২৪ পয়সা ছিল। সুতরাং দিন দিন ভারতীয় রুপির বিপরীতে টাকা আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ, সে দেশটি থেকে বাংলাদেশ এখন অর্থনীতির অনেক সূচকেই এগিয়ে। ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন স্বাবলম্বী। উন্নয়নে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন আর নতুন কোনো তথ্য নয়। বছর বছর দুদেশের মধ্যে নানা সূচকে বাড়ছে ব্যবধান। আর এর প্রভাব পড়েছে দুদেশের মুদ্রার মানেও। এখন বাংলাদেশের টাকার মান পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশের ১০০ টাকায় পাকিস্তানে পাওয়া যায় ১৯৮ রুপি। অথচ স্বাধীনতার পর চিত্রটা ছিল পুরো উল্টো। তখন পাকিস্তানের ১০০ রুপির মান ছিল বাংলাদেশের ১৬৫ টাকা। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্ব করতেই পারি।

আরেক অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এক সময়ের শূন্য হাতে শুরু হওয়া বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে আপন গতিতে। নারীর ক্ষমতায়ন, বেকারত্ব দূর, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকেই এখন এগিয়ে বাংলাদেশ। উন্নয়নে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন আর নতুন কোনো তথ্য নয়। দুদেশের মধ্যে নানা সূচকে বাড়ছে ব্যবধান। আর এর প্রভাব পড়েছে দুদেশের মুদ্রার মানেও। অর্থনীতি বা উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা উঠলেই পাকিস্তানের মন্ত্রী, রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদরা এখন বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ টেনে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি প্রথম মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় যুক্তরাজ্যের ১ পাউন্ড স্টার্লিংয়ে পাওয়া যেত বাংলাদেশি ১৮ দশমিক ৯৬ টাকা। তখন পাউন্ডের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রার মান ছিল ১১ দশমিক ৪৩ রুপি। সেই হিসাবে তখন ১ পাকিস্তানি রুপির বিপরীতে বাংলাদেশকে খরচ করতে হতো ১ দশমিক ৬৫ টাকা। এখন ঠিক এর উল্টো চিত্র। এটি বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ১ টাকায় পাওয়া যেত ১ দশমিক ০৭ পাকিস্তানি রুপি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তা দাঁড়ায় ১ দশমিক ২৫ রুপিতে। এরপর ২০২০ সালের আগস্টে ১ টাকার বিপরীতে ১ দশমিক ৯৭ রুপি পাওয়া যেত। মাঝে রুপি কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় চলতি বছরের মে মাসে ১ দশমিক ৭৯ রুপিতে বিনিময় হতো ১ টাকা। তবে তারপর থেকে আবারও দর হারানোয় ১ টাকায় বর্তমানে বিনিময়মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৯৮ রুপি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই ১ টাকায় ২ রুপি মিলবে সে কথা বলাই যায়।

এক্স ই নামে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমানে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৭ আর পাকিস্তানের ৪ দশমিক ১ শতাংশ। বর্তমানে ১ ডলার কিনতে পাকিস্তানের স্থানীয় মুদ্রা ১৬৯ রুপি লাগছে।

সেখানে ১ ডলার কিনতে বাংলাদেশে লাগছে মাত্র ৮৫ থেকে সাড়ে ৮৫ টাকার মতো। ২০১১ সালের নভেম্বরেও পাকিস্তানি ৮৬-৮৭ রুপিতে মিলত ১ মার্কিন ডলার। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৯৮ থেকে ১০৭ রুপিতে পাওয়া যেত ১ ডলার। অন্যদিকে ২০১১ সালের অক্টোবরে ৭৫ টাকায় পাওয়া যেত ১ মার্কিন ডলার, যা ২০১২ সালে ৮৪ টাকা ছাড়ালেও পরের ৪ বছর ডলারের দাম ৭৭ থেকে ৭৯ টাকার মধ্যেই ছিল।

২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের দাম ৮০ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। সার্বিক বিচারে বাংলাদেশের টাকার মান বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে শক্ত অবস্থানেই আছে এবং প্রায় এক দশক ধরে অনেকটাই স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে।