চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বৈশ্বিক আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রশংসা করে করোনাভাইরাস মহামারির এই সংকটের সময়েও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশার কথা শুনিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ধারাবাহিক ইতিবাচক ধারার রেকর্ড রয়েছে। দেশটি গত এক দশকে বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে।
আর এটা সম্ভব হয়েছে, দেশটির বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠী (জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ), রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শক্তিশালী অবস্থান এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে।
করোনা মহামারির মধ্যেও রপ্তানি খাতের ইতিবাচক ধারা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমাগত পুনরুদ্ধার ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
‘বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক’ শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৫০তম জন্মদিনে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটি সফল পথচলার রেকর্ড রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বকে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের একটি অসাধারণ গল্প বলে। ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়, তখন এই দেশটির মাথাপিছু আয় ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে কম। ৫০ বছরে উন্নয়নের অনেক গল্প যুক্ত হয়েছে দেশটির ইতিহাসে।
‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে; ২০২৬ সাল থেকে সেই পথচলা শুরু করবে বাংলাদেশ। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের হিসাবে তা ১৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসে। এ ছাড়া মানব উন্নয়ন সূচকেও অনেক উন্নতি করেছে দেশটি।’
২০১৬ সালের পর দারিদ্র্যের হার নিয়ে নতুন কোনো তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরো। এর আগে গত জুন মাসে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছিল চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। বাংলাদেশ সরকার এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে; ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।