জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল ‘রংপুরের গৌরব’ শতরঞ্জি

শতরঞ্জি রংপুরের ঐতিহ্যবাহী বুননশিল্প। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। জামদানির পর এবার শতরঞ্জি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যা রংপুরবাসীর জন্য গৌরবের।
ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফর (ডিপিডিটি)। স্বীকৃতির পরই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন এখানকার শতরঞ্জি শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা।

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রংপুরে শতরঞ্জি বুননের কাজ শুরু হয়। বর্তমান বিশ্বে শতরঞ্জির চাহিদা ব্যাপক। শতরঞ্জি তৈরিতে কোনো ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। এটি হস্তজাত পণ্য। বাঁশ ও রশি দিয়ে টানা দেয়া হয়। পাটের সুতো দিয়ে সম্পূর্ণ হাতের ব্যবহারেই তৈরি হয় নান্দনিক নকশার শতরঞ্জি। এ পণ্যে কোনো জোড়া থাকে না।

রংপুরের শতরঞ্জি জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ২০১৯ সালের ১১ জুলাই বিসিক পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরে আবেদন করা হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ফর্মস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অফিসে ‘রংপুরের শতরঞ্জি’র জার্নাল প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শতরঞ্জিকে ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ দেয় ডিপিডিটি।

অষ্টাদশ শতকের চল্লিশের দশকে ব্রিটিশ নাগরিক মি. নিসবেত তৎকালীন রংপুর জেলার কালেক্টর ছিলেন। সে সময় নিসবেতগঞ্জ মহল্লার নাম ছিল পীরপুর। সেই পীরপুরে তৈরি হতো মোটা মোটা ডোরাকাটা রং-বেরংয়ের সুতার শতরঞ্জি। কালেক্টর নিসবেত এসব শতরঞ্জি দেখে মুগ্ধ হন। পরবর্তীতে তিনি শতরঞ্জির গুণগতমান উন্নয়ন এবং এ শিল্পের প্রচার ও প্রসারে সহায়তা করেন এবং উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক বিপণনের ব্যবস্থা করেন।

রংপুরের ৭০০ বছর আগের ঐতিহ্য শতরঞ্জি জিআই সনদ লাভ করায় খুশি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক, শ্রমিক ও সুধীজন। জিআই সনদ পাওয়ায় নতুন করে প্রাণের স্পন্দন ফিরেছে গৌরবময় এ শিল্পে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কারুপণ্যের শতরঞ্জি এখন বিশ্বের ৭১টি দেশে রফতানি হচ্ছে।

কারুপণ্যের জনসংযোগ উপদেষ্টা মাহাবুব রহমান বলেন, রংপুরের শতরঞ্জি এখন বিশ্বের কাছে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ পণ্যের মূল্যায়নের পাশাপাশি মূল্যও বেড়েছে।

বিদেশে শতরঞ্জি রফতানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় বড় এনজিওসহ তিনটি বায়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শতরঞ্জিগুলো রফতানি হয়ে থাকে। বায়ার প্রতিষ্ঠনগুলোর অর্ডার মতে শতরঞ্জিগুলো তৈরি হয়। তারাই সেগুলো বিদেশে পাঠিয়ে দেন। জিআই পণ্য হিসেবে শতরঞ্জি বিদেশে গেলে উচ্চমূল্যের কারণে দেশের রেমিট্যান্স বাড়বে। উপকৃত হবে শতরঞ্জি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও।

গত ১৭ জুন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রংপুরের শতরঞ্জি স্বীকৃতির বিষয়টি জানায়। রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে ডিপিডিটি আয়োজিত ‘জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধাসম্পদ’ শীর্ষক সেমিনার এবং বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২১ অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসানের হাতে এ স্বীকৃতির সনদ তুলে দেন। শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।