রোমাঞ্চকর জয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

নাঈম শেখ মিচেল মার্শের ক্যাচটা নিতেই সমুদ্রের গর্জনে ফেটে পড়লেন শরীফুল ইসলাম। এ তরুণের বুনো উল্লাসের সঙ্গে শামিল হলো বাংলাদেশ দল। কার্যত তখনই ম্যাচটা হাতের মুঠোয় নিয়েছিল টাইগাররা। ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্ভেদ্য কাটার-স্লোয়ার পড়তে পারেনি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। ঐ ওভারে অসামান্য মুন্সিয়ানায় মাত্র ১ রান দেন কাটার মাস্টার।

কিন্তু রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছিল শেষ ওভারের প্রথম বলে অ্যালেক্স ক্যারি মেহেদী হাসানকে ছক্কা মারলে। সবার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন ক্যারি। পরের ৫ বলে অবশ্য ৫ রানের বেশি দেননি মেহেদী, আটকে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ানদের সর্বগ্রাসী চেষ্টাকে। গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় টি-২০ ম্যাচে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১০ রানের রোমাঞ্চকর জয় পায় বাংলাদেশ।

ক্রিকেট কুলীন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই ৩-০ তে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। নিজেদের ইতিহাসে প্রথম বার কোনো ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ানকে সিরিজ হারানোর গৌরব অর্জন করল টাইগাররা।

টস জিতে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ১২৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। জবাবে মিচেল মার্শের হাফ সেঞ্চুরির পরও ৪ উইকেটে ১১৭ রানের বেশি যেতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ সেরা হন। আজ সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল। ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।

রান তাড়া করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে (১) ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দেন নাসুম। দ্বিতীয় উইকেটে ম্যাকডারমট-মিচেল মার্শের ৬৩ রানের জুটি চাপ বাড়িয়েছিল। শরীফুলকে স্লেজিং করে উত্তাপ ছড়ান মার্শ। যার জবাব দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ৭১ রানে সাকিবের বলে ম্যাকডারমট বোল্ড হলে সেই জুটি ভাঙে। তিনি ৩৫ রান করেন। ৩ রানের ব্যবধানে মোসেস হেনরিকস (২) শরীফুলের শিকার হন। পরে ১৮তম ওভারের প্রথম বলে বাংলাদেশের গলার কাঁটা মার্শকে ফেরান এ তরুণ বাঁহাতি পেসার। বুনো উল্লাসে মাতেন তিনি। মার্শ ৪৭ বলে ৫১ রান করেন।

ইনিংসের শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য ২৩ ও ৬ বলে ২২ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু অ্যালেক্স ক্যারি, ড্যান ক্রিস্টিয়ান পেরে উঠেননি মুস্তাফিজের দুরন্ত বোলিংয়ে বিপরীতে রান-বলের দূরত্ব ঘোচাতে। বাংলাদেশের শরীফুল ২টি, সাকিব-নাসুম ১টি করে উইকেট পান। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ।

এর আগে বৃষ্টির কারণে গতকাল নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর ম্যাচ শুরু হলেও ওভার কমেনি। মন্থর, নিচু বাউন্সের চেনা উইকেটে দুটি রান আউট ও অস্ট্রেলিয়ান পেসার নাথান ইলিসের হ্যাটট্রিকের ধাক্কায় বড় স্কোর পায়নি বাংলাদেশ। দলীয় ৩ রানে বিদায় নেন নাঈম শেখ (১), সৌম্য (২)। তারপর সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ৪৪ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সাকিব ১৭ বলে ২৬ রান করে জাম্পার শিকার হন। মিডল অর্ডারে ইনফর্ম আফিফ (১৯), নুরুল হাসান সোহানের (১১) দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে বাধা পায় বাংলাদেশের রানের গতি। শামীম পাটোয়ারি (৩) দ্রুত ফিরলেও সপ্তম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-মেহেদী হাসান ৩০ রানের জুটি গড়েন। ইনিংসের শেষ ওভারে চার মেরে পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। বোল্ড হওয়ার আগে ৫২ রান করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

ইনিংসের শেষ দুই বলে মুস্তাফিজ (০), মেহেদী (৬) ক্যাচ দিয়ে ফিরলে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক পেয়ে যান নাথান ইলিস। টি-২০-র ইতিহাসে অভিষেকেই এটি প্রথম হ্যাটট্রিক ও সবমিলিয়ে ১৭তম হ্যাটট্রিক। অস্ট্রেলিয়ার নাথান ইলিস ৩টি, হ্যাজেলউড, জাম্পা ২টি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২৭/৯
অস্ট্রেলিয়া : ২০ ওভারে ১১৭/৪
ফল : বাংলাদেশ ১০ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)