আগস্টে আসছে আরো ৫০ লাখ টিকা

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আগস্ট মাসে দেশে আরও ৫০ লাখ করোনাভাইরাসের টিকা আসবে। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার টিকা পাচ্ছি। এরই মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা পেয়েছি। মর্ডানার টিকা পেয়েছি, ফাইজারের টিকা পেয়েছি। ভারতের কাছে অ্যাস্ট্রোজেনেকার ২ কোটিরও বেশি টিকা পাওনা রয়েছে। চীনের সঙ্গে চুক্তি করে সিনোফার্মের অনেক টিকা পেয়েছি। এ মাসে ৫০ লাখ টিকা আসা নিশ্চিত হয়েছে। হয়তো এর বেশিও আসতে পারে। ফাইজারের টিকাও এ মাসে আসার কথা রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে টিকা নেয়ার চুক্তিতে আমরা আছি। সেখানেও আমাদের ১ কোটি টিকার অর্ডার দেয়া আছে। এছাড়া আগামী বছর জনসন অ্যান্ড জনসনের ৭ কোটি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে টিকা পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, যেভাবে টিকা পাচ্ছি, তাতে আমরা ভালো একটা অবস্থানে থাকবো। আগামী ৭ আগস্ট থেকে দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে বয়স্কদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রায় ১৪ হাজার টিকা কেন্দ্র থেকে টিকা দেয়া হবে। আশা রাখছি, প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ মিলে প্রায় ১ কোটি টিকা দিতে পারবো। আগামীতেও টিকা পাওয়া সাপেক্ষে আমাদের এ কার্যক্রম চলবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টি সেবার মাধ্যমে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন কর্মসূচির উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ বছর ২ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট এই সপ্তাহটি পালিত হচ্ছে। ভার্চুয়ালি মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের শুভ উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাতৃদুগ্ধ দান সুরক্ষায়: সকলের সম্মিলিত দায়’।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। যে জাতি শিশুদের কথা ভাবেনা সে জাতি খুব বেশি উন্নত হতে পারে না। আর দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে উন্নত অবস্থানে দেখতে হলে আমাদের আজকের এবং অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই।

বিভিন্ন জরিপের তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে মৃত্যুর হার শতকরা ৩১ ভাগ কমে যায়। আর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করালে শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি আরো ১৩ শতাংশ কমে যায়। তাই শিশুর মৃত্যুহার রোধে এবং শারিরীক ও মানসিক বিকাশে জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যেই মায়ের দুধ পান, পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান এবং পূর্ণ ৬ মাস বয়সের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত ঘরে তৈরি বাড়তি খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে।

বিশ্বব্যাপী শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর হার এখনো অনেক কম। বিশ্বব্যাপী মাত্র ৪৩ শতাংশ নবজাতককে জন্মর ১ ঘন্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করে থাকে এবং ৪১ শতাংশ শিশুকে পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করানো হয়। বাংলাদেশে এই হার বর্তমানে যথাক্রমে ৬৯ শতাংশ এবং ৬৫ শতাংশ। শিশুকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানোর হার এখন ৮৭ শতাংশ, যদিও ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শিশুর পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করানোর হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ অর্জন করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে নিরাপদে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে ঢাকা শহরে ২৫টি, বিভাগীয় শহরে ৫টি, জেলা শহরে ১৩টিসহ মোট ৪৩টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে। এছাড়াও গার্মেন্টসে কর্মরত নারীদের সন্তানদের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জের প্রতিটিতে ৩০ আসন বিশিষ্ট ১৫টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে। হত দরিদ্র গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ভাতা ৫০০ টাকার স্থলে ৮০০ টাকা করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ভাতার মেয়াদ ২ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩ বছর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু-সহ অন্যান্য ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।

তথ্যসূত্র: ইনকিলাব